অপেক্ষা বাড়ল বাংলাদেশের
আগের ম্যাচে বাংলাদেশের পাঁচ উইকেটের দাপুটে জয়ে ফিল্ডারদের ক্যাচ মিসের মহড়া আড়ালে চলে গিয়েছিল। কাল ক্যাচ মিসের সেই পুরনো রোগই ডুবিয়ে দিল দলকে।
মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে নখ কামড়ানো উত্তেজনার ম্যাচে বাংলাদেশকে চার উইকেটে হারিয়ে সিরিজে টিকে থাকল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। শাই হোপের দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে মাত্র দুই বল বাকি থাকতে সফরে নিজেদের প্রথম জয় তুলে নেয় ক্যারিবীয়রা।
উইন্ডিজের জয়ে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে এখন ১-১ সমতা। মিরপুরে আর সিরিজ জয়ের উৎসব হল না স্বাগতিকদের। আগামী শুক্রবার সিলেটে তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে এখন অলিখিত ফাইনাল। কাল টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম ও সাকিব আল হাসানের ফিফটিতে সাত উইকেটে ২৫৫ রান তুলেছিল বাংলাদেশ।
জয়ের জন্য সেটাই যথেষ্ট মনে হচ্ছিল। বাংলাদেশের পাঁচ সিনিয়র ক্রিকেটার- মাশরাফি, মুশফিক, সাকিব, তামিম ও মাহমুদউল্লাহর জন্য এটি ছিল দারুণ এক মাইলফলকের ম্যাচ।
বাংলাদেশ ক্রিকেটের পালাবদলের পাঁচ নায়ক কাল একসঙ্গে খেলতে নেমেছিলেন নিজেদের শততম আন্তর্জাতিক ম্যাচ। পঞ্চপাণ্ডবের অন্যরকম এই সেঞ্চুরির পাশাপাশি মাশরাফি কাল ছুঁয়েছেন সবচেয়ে বেশি ৬৯টি ওয়ানডেতে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেয়া হাবিবুল বাশারের রেকর্ড।
কিন্তু উপলক্ষ দুটি জয়ের আল্পনায় রাঙাতে পারল না বাংলাদেশ। তাতে বাড়ল সিরিজ জয়ের অপেক্ষা। কার্যত একাই বাংলাদেশের মুঠো থেকে জয় ছিনিয়ে নিয়েছেন শাই হোপ।
১৪৪ বলে অপরাজিত ১৪৬ রানের অসাধারণ এক ইনিংস খেলে দলকে শেষ ওভারে জয়ের ঠিকানায় পৌঁছে দেন এই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান। মাহমুদউল্লাহর করা শেষ ওভারে ছয় বলে ছয় রানের সহজ সমীকরণ মেলাতে সমস্যা হয়নি হোপের।
তবে এর আগে বাংলাদেশই ছিল চালকের আসনে। ৩৯ ওভারে উইন্ডিজের সংগ্রহ ছিল ছয় উইকেটে ১৮৫ রান। সেখান থেকে সপ্তম উইকেটে কিমো পলের (১৮*) সঙ্গে ৬৯ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে পাশার দান উল্টে দেন হোপ। পলের আগে হোপকে কিছুটা সঙ্গ দিতে পেরেছেন শুধু ড্যারেন ব্রাভো (২৭) ও মার্লন স্যামুয়েলস (২৬)।
বাংলাদেশের পক্ষে মোস্তাফিজ ও রুবেল দুটি করে এবং মিরাজ ও মাশরাফি একটি করে উইকেট নেন। এখন বছরের শেষ ওয়ানডে সিরিজটা জিততে সিলেট ভেন্যুর অভিষেক ওয়ানডে জয়ের রঙে রাঙাতে হবে বাংলাদেশকে।
এর আগে তিন সিনিয়র ক্রিকেটারের তিন ফিফটিতে টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশ ২৫৫/৭ করে। সাকিব (৬৫), মুশফিক (৬২) এবং তামিম (৫০) তিন হাফ সেঞ্চুরিয়ান। দ্বিতীয় উইকেটে তামিম ও মুশফিকের ১১১ রানের জুটির ওপর দাঁড়িয়ে যায় বাংলাদেশের ইনিংস। তামিম ৪৩তম ও মুশফিকুর রহিম তুলে নেন ৩২তম ওয়ানডে ফিফটি।
এরপর সাকিব পেয়ে যান তার ৪০তম ওডিআই ফিফটি। ৬২ বলে সাকিব ছয়টি চার এবং একটি ছয় হাঁকান। এর মধ্যে ৪৫তম ওভারে দুটি চার এবং একমাত্র ছয় মারেন সাকিব। ওশানে থমাস ওই ওভারে ১৬ রান দেন।
৪৭তম ওভারে সাকিব আউট হওয়ার পর মেহেদী হাসান মিরাজ ও মাশরাফি মুর্তজা শেষ তিন ওভারে মাত্র ১৬ রান জমা করেন স্কোর বোর্ডে। বাংলাদেশ শেষ ১০ ওভারে মাত্র ৬৪ রান তোলে।
তামিমের উদ্বোধনী জুটি লিটন দাস ওশানের ইয়র্কারে পায়ে চোট পেয়ে স্ট্রেচারে মাঠ ছাড়েন। ইমরুল কায়েস উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন শূন্য রানে। এরপর রান তোলার দায়িত্ব নেন তামিম ও মুশফিক।
২৪তম ওভারে এই জুটি ভাঙেন বিশু। ডিপ মিডউইকেটে ক্যাচ দেন তামিম। তার আগে তিনি বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে তিন ফরম্যাট মিলিয়ে ১২ হাজার রানের মাইলফলক টপকে যান।
পাশাপাশি বাংলাদেশের হয়ে ওয়ানডেতে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরির জুটির রেকর্ডটিও এককভাবে নিজেদের করে নেন তামিম ও মুশফিক। ওয়ানডেতে এটি তাদের পঞ্চম শতরানের জুটি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ চারটি শতরানের জুটি আছে সাকিব ও মুশফিকের।
তামিমের বিদায়ের পর মুশফিকও বেশিক্ষণ ক্রিজে থাকেননি। ৬২ বলে পাঁচটি চার হাঁকান পঞ্চপাণ্ডবের অন্যতম মুশফিক।
মাহমুদউল্লাহ ও সাকিব চতুর্থ উইকেটে ৬১ রানের জুটি গড়েন। সৌম্য আবারও ব্যর্থ। মাত্র ছয় রানে থার্ডম্যানে ক্যাচ দেন তিনি বিশুর বলে। প্রথম ওয়ানডেতে ১৯ রান করেছিলেন সৌম্য।
সৌম্য আউট হওয়ার পর ক্রিজে ফিরে আসেন লিটন। কিন্তু আর মাত্র তিন রান যোগ করে হেটমায়ারের তালুবন্দি হন তিনি। ৫৪ রানে তিন উইকেট নেন ওশানে থমাস।
কমেন্ট