আজারবাইজান-আর্মেনিয়ার মধ্যে সামরিক সংঘাত, নিহত ২৩

আজারবাইজান-আর্মেনিয়ার মধ্যে সামরিক সংঘাত, নিহত ২৩

দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্র আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার মধ্যে নতুন করে সংঘাত ছড়িয়ে পড়েছে। বিতর্কিত নাগর্নো-কারাবাখ অঞ্চলে গতকাল রোববার দুপক্ষের মধ্যে লড়াই শুরু হয়েছে। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ২৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া আহত হয়েছে আরো শতাধিক। তবে হতাহতরা সামরিক নাকি বেসামরিক নাগরিক, তা এখনো পরিষ্কার নয়। দুই দেশের সরকারই সংঘাতের জন্য একে অপরকে দায়ী করেছে। সংবাদমাধ্যম বিবিসি ও ডয়চে ভেলে এ খবর জানিয়েছে। নাগর্নো-কারাবাখ অঞ্চল আন্তর্জাতিকভাবে আজারবাইজানের অংশ হিসেবে স্বীকৃত হলেও অঞ্চলটি নিয়ন্ত্রণ করে আর্মেনিয়ার স্থানীয় নৃগোষ্ঠী। আজারবাইজানের চারটি সামরিক হেলিকপ্টার ভূপাতিত করার পাশাপাশি ১০টি ট্যাঙ্ক ও ১৫টি ড্রোনে আঘাত হানা হয়েছে বলে দাবি করেছে আর্মেনিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এর আগে আজারবাইজান নাগর্নো-কারাবাখ অঞ্চলে বেসামরিক নাগরিকদের ওপরে বোমা বর্ষণ করেছে বলেও উল্লেখ করা হয়। মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেছেন, ‘এ সংঘাতের পুরো দায় আজারবাইজানের সামরিক-রাজনৈতিক সরকারের ওপর বর্তায়।’ অন্যদিকে আজারবাইজান বলছে, আর্মেনিয়া নাগর্নো-কারাবাখ অঞ্চলে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে। এতে বেসামরিক ও সামরিক বাহিনীর সদস্য হতাহত হয়েছেন বলে উল্লেখ করেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ। অন্যদিকে, নিজেদের হেলিকপ্টার ভূপাতিত হওয়া ও ট্যাঙ্কে আর্মেনিয়ার আঘাত হানার দাবি অস্বীকার করেছে আজারবাইজানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। নাগর্নো-কারাবাখ অঞ্চলটির বেশ কয়েকটি গ্রাম নিজেরা নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে বলে উল্টো দাবি করেছে আজারবাইজান। আজারবাইজানি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘আমরা ছয়টি গ্রাম মুক্ত করেছি। এর মধ্যে পাঁচটি ফিজুলি ডিস্ট্রিক্টে আর একটি জেবরাইলে।’ সামরিক আইন জারি এদিকে, দুপক্ষের লড়াইয়ে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নাগর্নো-কারাবাখ অঞ্চলের স্টেপানাকেয়ার্ট শহর। সেখানকার বাসিন্দাদের নিরাপদে থাকতে বলেছে শহর কর্তৃপক্ষ। লড়াইয়ে বেশ কয়েকটি গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, আহত হয়েছেন অনেকে। অঞ্চলটিতে সামরিক আইন জারির ঘোষণা দিয়েছেন নাগর্নো-কারাবাখ অঞ্চলের প্রেসিডেন্ট আরাইক হারুতিউনিয়ান। এ ছাড়া দেশজুড়ে সামরিক আইন জারির ঘোষণা দিয়েছেন আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশেনিয়ানও। At the decision of the Government, martial law and general mobilization is being declared in the Republic of #Armenia. I call on the personnel attached to the troops to present themselves to their district commissariats. For the fatherland, for victory. — Nikol Pashinyan (@NikolPashinyan) September 27, 2020 ফেসবুকে প্রকাশিত এক ভিডিওতে আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী দাবি করেছেন, আজারবাইজানের একনায়কতান্ত্রিক সরকার আর্মেনিয়ার জনগণের সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। ‘আমরা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত’, বলেন নিকোল পাশেনিয়ানও। এদিকে, ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট শার্ল মিসেল এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে দুপক্ষকে লড়াই বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন। টুইটার বার্তায় তিনি লিখেছেন, কোনো শর্ত ছাড়া আলোচনার টেবিলে বসাই এ মুহূর্তে একমাত্র পথ। একই বার্তা দিয়েছে ফ্রান্স ও জার্মানি। Reports of hostilities from the Nagorno-Karabakh conflict zone are of most serious concern. Military action must stop, as a matter of urgency, to prevent a further escalation. An immediate return to negotiations, without preconditions, is the only way forward. — Charles Michel (@eucopresident) September 27, 2020 আজারবাইজানের পাশে তুরস্ক কয়েক মাস ধরেই অঞ্চলটিতে দুদেশের উত্তেজনা চলছিল। ককেশাস অঞ্চল (ইউরোপ ও এশিয়ার মধ্যবর্তী সীমান্ত এলাকায় অবস্থিত একটি অঞ্চল) বিশেষজ্ঞ সিলভিয়া স্টোবার বলেন, সম্ভাব্য লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল আজারবাইজান ও আর্মেনিয়া। সিলভিয়া স্টোবার বলেন, তুরস্কের সহযোগিতা পেয়ে আজারবাইজানের নেতৃত্ব সেখানে সংঘাতে জড়ানোর বিষয়ে উৎসাহী হয়ে ওঠে। অন্যদিকে, রাশিয়া থেকে অস্ত্র আমদানি করে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত ছিল আর্মেনিয়াও। এরই মধ্যে এই সংঘাতে সরাসরি আজারবাইজানের প্রতি সমর্থন দিয়েছে তুরস্ক। হামলার জন্য আর্মেনিয়াকে দায়ী করে বিবৃতি দিয়েছে তুরস্কের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। ‘আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষার এই লড়াইয়ে আমরা আমাদের আজারবাইজানের ভাইদের সব রকমের সহযোগিতা দেব’, এক বিবৃতিতে এভাবেই আজারবাইজান সরকারকে আশ্বস্ত করেছেন তুরস্কের প্রতিরক্ষামন্ত্রী হুলুসি আকার। অন্যদিকে, আজারবাইজান-আর্মেনিয়াকে অনতিবিলম্বে সংঘাত থামিয়ে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছে রাশিয়া। সংঘাতের সূচনা যেভাবে ২০১৬ সালের পর গতকাল রোববারই প্রথম আজারবাইজান-আর্মেনিয়ার মধ্যে বড় ধরনের লড়াই শুরু হলো। সোভিয়েত ইউনিয়ন পতনের পর থেকেই এ অঞ্চলে দুদেশের বিরোধ চলছে। ১৯৯০-এর দশকে আর্মেনিয়ান নৃগোষ্ঠী আজারবাইজানের কাছ থেকে কারাবাখ দখল করে। এ নিয়ে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে সে সময়। শুরু হয় যুদ্ধ, যাতে প্রাণ হারিয়েছে ৩০ হাজার মানুষ। ১৯৯৪ সালে দুপক্ষের মধ্য যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সরাসরি সংঘাতের ইতি ঘটে। ২০১০ সালে ফ্রান্স, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় শান্তিচুক্তির উদ্যোগ ভেস্তে যায়। নিজেদের অঞ্চল পুনরায় দখলে বেশ কয়েকবারই হুমকি দিয়েছে আজারবাইজান। নিজেদের স্বাধীনতা ঘোষণা করলেও নাগর্নো-কারাবাখ অনেকটাই আর্মেনিয়ার সহযোগিতার ওপর নির্ভরশীল। অঞ্চলটিকে সামরিকভাবে রক্ষার কথা প্রকাশ্যেই বলে আসছে আর্মেনিয়াও।
নিষেধাজ্ঞায় বাদ সাধলেন বিচারক, যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক ডাউনলোড চলবে পূর্ববর্তী

নিষেধাজ্ঞায় বাদ সাধলেন বিচারক, যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক ডাউনলোড চলবে

ভয়াবহ যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়েছে আর্মেনিয়া-আজারবাইজানে পরবর্তী

ভয়াবহ যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়েছে আর্মেনিয়া-আজারবাইজানে

কমেন্ট