আজ থেকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের গণসংযোগ শুরু

আজ থেকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের গণসংযোগ শুরু

আজ সোমবার প্রতীক বরাদ্দের মাধ্যমে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের গণসংযোগ শুরু হচ্ছে। আক্ষরিক অর্থে শুরু হচ্ছে ভোটের বাজনাও। ঢাক-ঢোলের বাদ্যিযোগে শুরু হবে প্রার্থীদের প্রচার। তবে আনন্দময় এ উৎসবকে ঘিরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ভোটারদের মধ্যে নানা সংশয় ও শঙ্কাও কাজ করছে। নির্বাচনী পরিবেশ কেমন হবে-এ নিয়ে উদ্বিঘ্নবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো। সাধারণ মানুষের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে আলোচনার তুফান বইছে। তবে দল-মত নির্বিশেষে সাধারণ সব মানুষের প্রত্যাশা,নির্বাচন যেন সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ হয়। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বরচন্দ্র রায় মনে করেন, ‘ভোটের মাঠে কোনো সুবাতাস নেই। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হয়নি। নেতাকর্মীরা হামলা-মামলায় জর্জরিত। নির্বাচন নিয়ে নানা শঙ্কা ও কানাঘুষা রয়েছে। এ রকম পরিস্থিতি স্বাভাবিক নির্বাচনের পরিবেশ নয়। তাই জনগণের মনে শঙ্কা ও সংশয় রয়েই গেছে।’ ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল ২৮ নভেম্বর, মনোনয়নপত্র বাছাই ২ ডিসেম্বর। আপিল ৩, ৪ ও ৫। শুনানি নিষ্পত্তি ৬, ৭ ও ৮ ডিসেম্বর। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ছিল ৯ ডিসেম্বর। ভোটগ্রহণ ৩০ ডিসেম্বর। প্রায় এক মাস ধরে প্রার্থী চূড়ান্তকরণ নিয়ে ঘাম ঝরিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো। বিশেষ করে, জোটের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট এবং বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দল ও ঐক্যফ্রন্টের মধ্যে আসন বণ্টন নিয়ে নাটকীয় সব ঘটনা ঘটেছে। নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পরই জোটে সমীকরণ পাল্টে যায়। জাতীয় পার্টি এরশাদের সঙ্গে আসন বণ্টন নিয়ে সরকারি দলের মনকষাকষি এখনো চলছে। জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে শেষমুহূর্তে সমঝোতা হলেও নানা কারণে অসন্তুষ্টি রয়ে গেল দলটিতে। এসব নানা জল্পনা-কল্পনার মধ্যে নির্বাচন মাঠে গড়াচ্ছে আজ। প্রতীক বরাদ্দ নিয়ে ভোটের মাঠে নেমে পড়বেন প্রার্থীরা। সকাল থেকে রাত অবধি চলবে গণসংযোগ। ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাবেন প্রার্থী। কেন্দ্রীয় নেতারা যাবেন আসনভিত্তিক গণসংযোগে। সুশাসনের জন্য নাগরিক- সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার আমাদের সময়কে বলেন, প্রার্থিতা চূড়ান্তকরণের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলো প্রাথমিক ধাপ পার করল। এখন শুরু হবে মূল লড়াই। কিন্তু মাঠের লড়াই শুরু হওয়ার আগে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা দরকার। সেই পরিবেশ এখনো হয়নি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিরপেক্ষ নয়। নির্বাচন কমিশনের পদক্ষেপে মনে হয় না তারা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড চায়। এ অবস্থায় সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। অবশ্য এবার লড়াই হবে মূলত নৌকা ও ধানের শীষ। কারণ প্রায় সব দলই আছে দুই জোটের মধ্যে। এর বাইরে বাম দলগুলোও ভোটের মাঠে আছে। ইসলামি কয়েকটি দল নির্বাচনী মাঠে থাকছে। সব মিলিয়ে এবার নির্বাচনী মাঠ একটু ব্যতিক্রম থাকবে। লড়াই হবে দুই জোটের। আওয়ামী লীগ তাদের শরিক জাতীয় পার্টিকে ২৭ আসনে ছাড় দিয়েছে বললেও জাতীয় পার্টির গতকালের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ২৯ আসনপ্রাপ্তির কথা। বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি ৫, জাসদ (ইনু) ৩, তরিকত ফেডারেশন ২, জাসদ (আম্বিয়া) ১ এবং জাতীয় পার্টি (জেপি) ১ আসন পেয়েছে। এ ছাড়া বিকল্পধারাকে ৩ আসন দেওয়া হয়েছে। অবশ্য জাপার জন্য আওয়ামী লীগের ছেড়ে দেওয়া এসব আসনের বাইরে জাতীয় পার্টি বরিশাল-৩, কুড়িগ্রাম-১ ও টাঙ্গাইল-৫ আসনটিও রাখে তাদের চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকায়। বিএনপি তাদের শরিক জামায়াতকে ২২, এলডিপি ৫, খেলাফত মজলিশ ২, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের দুই অংশে ৪, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) ২, বিজেপি ১, কল্যাণ পার্টি ১, এনপিপি ১, লেবার পার্টি ১, পিপিবি ১ এবং ঐক্যফ্রন্টের গণফোরাম ৭, জেএসডি ৫, নাগরিক ঐক্য ৪, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ৪ আসন অর্থাৎ ৫৯ আসন (উন্মুক্ত একটি ছাড়া) ছেড়ে দিয়েছে। এর বাইরে পাবনা-১ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসন উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। ভোট মাঠে গড়ালেও বিরোধপূর্ণ রাজনৈতিক অবস্থা এখনো বিরাজমান। মতের অমিলে এখন রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা সংকট। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে প্রতিদিনই বাদানুবাদ হচ্ছে। কথার মারপ্যাঁচে ফেলছে একে অপরকে। নির্বাচন কমিশনে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ আসছে। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হয়নি অভিযোগ আনছে বিএনপি। আওয়ামী লীগ বলছে, নির্বাচনের সুন্দর পরিবেশ আছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রাপ্তির সঙ্গে প্রত্যাশা মেলাতে না পারলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরি হয়। বছরের পর বছর বাংলাদেশের মানুষ তা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে। ভিন্ন প্রেক্ষাপট তৈরি হলে সৃষ্টি হতে পারে রাজনৈতিক অচলাবস্থা। অনেকে বলেনÑ রাজনীতিতে সমস্যা ও সংকট আছে। কেউ বলেনÑ সংকট কম, অস্বস্তি বেশি। বিশিষ্টজনদের মতে, রাজনীতিতে পথ ও মতের ভিন্নতা থাকবে। কর্মসূচি ও পরিকল্পনায় ফারাক থাকবে। তবে মনে রাখতে হবে, সেই পথ ও মতের ভিন্নতা যেন রাজনীতিকে বিদ্বিষ্ট ও হিংসাশ্রয়ী না করে। সব ধরনের দমনপীড়ন কিংবা অন্তর্ঘাত থেকে রাজনৈতিক পক্ষগুলোকে বেরিয়ে আসতে হবে। দেশে রাজনৈতিক সংকট আর অস্বস্তি যাই থাকুক না কেন, সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন হলে সংকট অনেক কমে আসবে। অবশ্য কমিশন কতটুকু শক্ত হাতে নির্বাচন পরিচালনা করতে পারবে, এ নিয়েও শঙ্কা আছে। কারণ নির্বাচন কমিশনারদের মধ্যে মতের অমিল আছে। সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে মতানৈক্যের কারণে অনেক সিদ্ধান্ত ঝুলে থাকে দীর্ঘ সময়। বিএনপি নীতিনির্ধারকরা জানিয়েছেন, কোনোভাবেই নির্বাচনের মাঠ ছাড়ছেন না তারা। শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকবেন। নির্বাচনকে দলটি নিয়েছে আন্দোলন হিসেবে। অবশ্য আজ গণসংযোগের দিন থেকে প্রত্যেক আসনে ব্যাপক শোডাউন করতে নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন, সিলেটে হযরত শাহজালাল (র) ও হযরত শাহপরান (র) মাজার জিয়ারতের মাধ্যমে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা গণসংযোগ শুরু করবেন। প্রায় সব আসনে তাদের সমাবেশ করার কথা রয়েছে। দলের নেতারা আরও বলছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাবন্দি থাকায় গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনসহ ঐক্যফ্রন্টের কেন্দ্রীয় নেতারা গণসংযোগে থাকবেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার চালাতে বিএনপি একটি উপকমিটি গঠন করেছে। ওই নেতার নেতৃত্বে ফেসবুকসহ সামাজিকমাধ্যমগুলোয় প্রচার চালাবে দলের এক দল তরুণ। এর সঙ্গে ছাত্রদলের নেতাদেরও সম্পৃক্ত করা হবে। এ ছাড়া জাতীয়তাবাদী মানসিকতার বেশ কয়েকজন ব্যক্তি আছেন, যারা ফেসবুকে সক্রিয়, তাদেরও কাজে লাগানো হবে। দলের এক নীতিনির্ধারক জানিয়েছেন, নির্বাচন পরিচালনা কমিটি ছাড়াও ১৪টি কমিটি গঠন করছে দলটি। আজকালের মধ্যে কমিটিগুলো ঘোষণা করা হবে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কয়েক দিন আগে জানিয়েছেন, আগামী ১৭ ডিসেম্বর তারা ইশতেহার ঘোষণা করবেন। জানা গেছে, গণভোট পুনঃপ্রবর্তন, বিশেষ ক্ষমতা আইন বাতিল, শিক্ষায় সব কর বাতিল, কোটা সংস্কারসহ বিভিন্ন দিক থাকছে। তরুণদের আকৃষ্ট করার দিকে মনোযোগ দিয়েই এবার ইশতেহার তৈরি করছে দলটি। আসন্ন একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জোটগতভাবে অংশ নিলেও নির্বাচনী প্রচারে দলীয় কৌশলকেই গুরুত্ব দেবে। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা নিজে প্রচারে নামবেন প্রতীক বরাদ্দের পর। তবে আরপিও বিধিনিষেধ থাকায় নির্বাচনী প্রচারের সময় তিনি কোনো ধরনের সরকারি সুযোগ-সুবিধা ব্যবহার করবেন না। গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া থেকে একাদশ সংসদ নির্বাচনী প্রচার শুরু করবেন শেখ হাসিনা। তিনি দক্ষিণ বঙ্গের কয়েকটি জেলা সফর শেষে সিলেট ও রংপুর সফরের মধ্য দিয়ে প্রচার শেষ করবেন। দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে যারা মনোনয়ন পাননি, তারা প্রচারের বিষয়টি কেন্দ্র থেকে সারাদেশে সমন্বয় করবেন। এবার মাঠের প্রচারের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ব্যাপক প্রচার চালাবে আওয়ামী লীগ। নির্বাচনী প্রচারে গত ১০ বছরে বিভিন্ন খাতে আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নচিত্র তুলে ধরার পাশাপাশি বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলের চিত্রও তুলে ধরবেন ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের এবারের ইশতেহারও করা হচ্ছে ২১০০ সালের মহাপরিকল্পনা নিয়ে। ইশতেহারে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে তরুণ ভোটাররা। সমৃদ্ধ বাংলাদেশের রূপরেখা নিয়ে আগামী ১৭ ডিসেম্বর দলের একাদশ সংসদ নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করতে পারেন দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান আমাদের সময়কে বলেন, গত ১০ বছরে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সারাদেশে যে উন্নয়ন হয়েছে, সেটিই ভোটারদের সামনে তুলে ধরা হবে।
আওয়ামী লীগ লড়বে ২৫৮টি আসনে, ২৭২ আসনে নৌকা পূর্ববর্তী

আওয়ামী লীগ লড়বে ২৫৮টি আসনে, ২৭২ আসনে নৌকা

বেগম রোকেয়া পদক-২০১৮ পেলেন পাঁচ নারী পরবর্তী

বেগম রোকেয়া পদক-২০১৮ পেলেন পাঁচ নারী

কমেন্ট