ইংল্যান্ড না ক্রোয়েশিয়া

ইংল্যান্ড না ক্রোয়েশিয়া

ইংল্যান্ড যখন সর্বশেষ বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে খেলে ১৯৯০ সালে, ক্রোয়েশিয়া তখনো স্বাধীন হয়নি! স্বাধীন দেশ হিসেবে ক্রোয়েশিয়ার প্রথম অংশগ্রহণ ১৯৯৮ সালে, সেবারই উঠে যায় সেমিফাইনালে। আর কখনো না! আজকের সেমিফাইনালে মুখোমুখি সেই ইংল্যান্ড-ক্রোয়েশিয়া। দুই দলের কাছেই এর তাত্পর্যটা বুঝতে পারছেন! বিশ্বকাপ শুরুর আগে এতটা কেউ ভাবেনি। দুই দলের পাঁড় সমর্থকরাও না। ইংল্যান্ড তো বহু বছরের মধ্যে বিশ্বকাপ খেলতে এসেছে বড় কোনো প্রত্যাশা ছাড়া। বিশ্বসেরা আসরে সাম্প্রতিক বছরগুলোর হতাশা তো ছিলই, সঙ্গে যোগ হয়েছে ২০১৬-র ইউরোতে ‘পুঁচকে’ আইসল্যান্ডের কাছে হেরে বিদায় নেওয়ার লজ্জা। আর ক্রোয়াটদের ওপরও প্রত্যাশার জোয়াল চাপানো ছিল না। আর্জেন্টিনার গ্রুপ থেকে নকআউট পর্ব নিশ্চিত করাই ছিল প্রাথমিক লক্ষ্য। সেই দল দুটি কি না বাজির দর উল্টে চলে এলো সেমিফাইনালে! গ্রুপ পর্বে তিউনিসিয়া-পানামার বিপক্ষে দুই জয়ে নকআউট পর্বে ওঠা নিশ্চিত করার পর বেলজিয়ামের বিপক্ষে দ্বিতীয় একাদশ নামায় ইংল্যান্ড। তাতে হেরে গ্রুপ রানার্সআপ হওয়াটা পরিণত শাপেবরে। ফাইনালে ওঠার পথে তুলনামূলক সহজ পথ যে পায় গ্যারেথ সাউথগেটের দল! শেষ ষোলোতে কলম্বিয়াকে টাইব্রেকারে হারানোর পর কোয়ার্টার ফাইনালে সুইডেনকে ২-০ গোলে হারিয়ে শেষ চারের লড়াইয়ে এখন ইংল্যান্ড। অন্যদিকে আর্জেন্টিনাসহ তিন দলকে হারিয়ে শতভাগ জয়ের রেকর্ড নিয়ে নকআউট পর্বে ওঠে ক্রোয়েশিয়া। এখানে দুটি জয়ই টাইব্রেকারে—প্রথমে ডেনমার্ক, পরে রাশিয়া তাদের শিকার। আজ দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ফাইনালে ওঠার স্বপ্ন নিয়ে মাঠে নামবে ক্রোয়েশিয়া। অন্যদিকে ৫২ বছর পর বিশ্বকাপ ট্রফি ঘরে ফেরানোর মিশনে ইংল্যান্ড। ১৯৬৬ সালে নিজেদের একমাত্র বিশ্বকাপ জেতে ইংল্যান্ড। এরপর থেকেই কেবল অপ্রাপ্তির হাহাকার। বিশ্বকাপ তো বটেই, ইউরোতেও তাঁদের পারফরম্যান্স গড়পড়তা। ১৯৯৬ সালে নিজ দেশে অনুষ্ঠিত ইউরোতে সর্বশেষ সেমিফাইনাল খেলে। সেবার ইংল্যান্ড দলের অফিশিয়াল গান হিসেবে রিলিজ করা হয় ‘ফুটবল ইজ কামিং হোম’ গানটি। দলের ব্যর্থতায় অনেক দিন আর তা গান না সমর্থকরা। সে গান এ বিশ্বকাপে ফিরেছে আবার ইংরেজদের মুখে মুখে। ১৯৯৬ ইউরোর দলে থাকা এখনকার কোচ সাউথগেটকে তা আনন্দ না দিয়ে পারে, ‘গত ২০ বছর ধরে ফুটবল ইজ কামিং হোম গানটি শুনি না। এখন সমর্থকরা এটি গাইছে শুনে ভালো লাগছে। আমাদের ’৯৬ সালের দলটি ছিল অনেক অভিজ্ঞ। প্রতিনিয়ত উন্নতি করছিলাম; এই দলটিও তা করছে। তবে আমরা সেমিফাইনালে খেলব এমনভাবে যেন তা যাত্রাপথের একটি ধাপ।’ বোঝাই যাচ্ছে, ফাইনালে চোখ সাউথগেটের। ইংল্যান্ডের সাম্প্রতিক সাফল্যখরা মনে রেখে সমর্থকদের এবার আনন্দে ভাসাতে চান তিনি, ‘আমরা প্রতিনিয়ত ইতিহাস তৈরি করছি। সবচেয়ে বড় জয় পেয়েছি; এক দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো নকআউট পর্বে উঠেছি; আরো বেশি সময় পর কোয়ার্টার ফাইনালে; এখন সেমিতে। প্রতিনিয়ত নিজেদের অতিক্রম করে যাচ্ছি। আমাদের দেশকে অনেক কঠিন সময়ের ভেতর দিয়ে যেতে হয়েছে। এখন আমাদের লক্ষ্য, সবাই মিলে দেশকে ফাইনালে তোলা।’ একই লক্ষ্য তো ক্রোয়েশিয়ারও। তাদের কোচ জলাতকো দালিচের। ক্রোয়েশিয়ান সংবাদপত্র ‘স্পোর্তসকে নোভোস্তি’ যাঁকে বর্ণনা করেছে ‘এই মুহূর্তে ক্রোয়েশিয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যক্তি’ হিসেবে। তাঁর কাছে ক্রোয়েশিয়ার সাফল্যের মানদণ্ড সেই ’৯৮-র সেমিফাইনালে ওঠা, ‘১৯৯৮ সালের ফ্রান্স বিশ্বকাপের মধুর স্মৃতি আমাদের মনে আছে। ওই প্রজন্ম অসাধারণ স্মৃতি উপহার দিয়েছে সব ক্রোয়াটদের। আমরা চাই সে দলের কাছাকাছি যেতে। জানি, কাজটি কঠিন। তবু আমরা চেষ্টা করব।’ সেমিতে তারা উঠে গেছে এরই মধ্যে। তবে ক্রোয়াটদের ভালোবাসায় ২০ বছর আগের দলের চেয়ে এগিয়ে যেতে হলে আরো বেশি কিছু করতে হবে বর্তমান প্রজন্মের। লুকা মডরিচ, ইভান রাকিটিচ, মারিও মান্দজুকিচদের সামর্থ্যের প্রমাণ এরই মধ্যে পেয়েছে আর্জেন্টিনা। সে কারণেই কি না সেমিফাইনালে পৌঁছে কারো ভয়ে ভীত নন ক্রোয়েশিয়ার কোচ দালিচ, ‘এখন পর্যন্ত আমাদের যা অর্জন, তাতে আনন্দিত। বিশ্বকাপের সেরা চার দলের একটি আমরা। বাকি তিন দল ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, বেলজিয়ামের জন্য আমাদের চূড়ান্ত সম্মান রয়েছে। তবে আমি মনে করি না, এই দলগুলোর কোনোটি আমাদের চেয়ে ভালো। আমরা ওদের চেয়ে কোনো অংশেই পিছিয়ে নেই।’ কারা এগিয়ে কারা পিছিয়ে—এর প্রমাণ হয়ে যাবে আজ মস্কোর লুজনিকি স্টেডিয়ামে। চার দিন এই মঞ্চেই নিশ্চয়ই আবার ফিরতে মরিয়া ইংল্যান্ড-ক্রোয়েশিয়া দুই দলই। ১৫ জুলাইয়ের ফাইনালে!
রিয়ালকে নিয়ে রোনালদোর আবেগঘন চিঠি পূর্ববর্তী

রিয়ালকে নিয়ে রোনালদোর আবেগঘন চিঠি

হাজার্ড, ‍লুকাকুদের নিয়ে গর্বিত মার্টিনেজ পরবর্তী

হাজার্ড, ‍লুকাকুদের নিয়ে গর্বিত মার্টিনেজ

কমেন্ট