ইউরোপে করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি উদ্বেগের বিষয় : ডব্লিউএইচও

ইউরোপে করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি উদ্বেগের বিষয় : ডব্লিউএইচও

জাতিসংঘের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) আঞ্চলিক প্রধান ডা. হানস হেনরি পি ক্লোগ বলেছেন, নভেল করোনাভাইরাসজনিত কোভিড-১৯ এখন ইউরোপে মৃত্যুর পঞ্চম প্রধান কারণ। ডা. হানস হেনরি পি ক্লোগ গতকাল বৃহস্পতিবার জানান, চলতি সপ্তাহে ইউরোপজুড়ে প্রায় সাত লাখ মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, যা মার্চ মাসে মহামারি শুরু হওয়ার পর সর্বোচ্চ সাপ্তাহিক সংক্রমণের ঘটনা। ইউএন নিউজের বরাত দিয়ে সংবাদ সংস্থা ইউএনবি এ খবর জানিয়েছে। ডা. হানস বলেন, বিভিন্ন দেশের সরকারের বিধিনিষেধগুলো কঠোর করা খুবই প্রয়োজন। কারণ তাৎপর্যপূর্ণভাবে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী এবং এ রোগে মৃতের সংখ্যা বাড়ছে। ডা. হানস আরো বলেন, ‘ইউরোপের মহামারি পরিস্থিতি এখন ব্যাপক উদ্বেগের বিষয়। প্রতিদিনকার আক্রান্তের সংখ্যা ও হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা বাড়েছে, কোভিড-১৯ এখন ইউরাপে মৃত্যুর পঞ্চম প্রধান কারণ এবং প্রতিদিন মৃত্যুর সংখ্যা এক হাজারে পৌঁছেছে।’ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যার রেকর্ড ডা. হানস বলেন, মাত্র ১০ দিনেই সামগ্রিকভাবে ইউরোপে কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৬০ লাখ থেকে লাফ দিয়ে ৭০ লাখে পৌঁছে গেছে। গত সপ্তাহে ছুটির দিন শনি ও রোববার দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা প্রথমবারের মতো এক লাখ ২০ হাজার ছাড়িয়েছে। ডা. হানস আরো বলেন, ‘এপ্রিলের তুলনায় প্রতিদিন দুই থেকে তিনগুণ বেশি রোগী শনাক্ত হলেও, আমরা মৃত্যুর সংখ্যা পাঁচগুণ কম লক্ষ্য করছি। একই সময়ে, ভাইরাসটিও পরিবর্তিত হয়নি, এটি আরো কম বা বেশি বিপজ্জনক হয়ে উঠেনি।’ সম্ভাব্য অবনতি এক বাস্তবতা ডা. হানস ব্যাখ্যা করেন যে আক্রান্তের হার বৃদ্ধির অন্যতম একটি কারণ হলো কম বয়সীদের মধ্যেও কোভিড-১৯ পরীক্ষা। এ জনসংখ্যাও আংশিকভাবে মৃত্যুহার হ্রাসের একটি কারণ। মহামারি সংক্রান্ত নির্ভরযোগ্য মডেলগুলো ইঙ্গিত দিচ্ছে যে দীর্ঘ দিন ধরে বিধিনিষেধ শিথিলকরণের ফলে এপ্রিলের তুলনায় মৃত্যুর হার চার থেকে পাঁচগুণ বেশি হতে পারে, যা ২০২১ সালের জানুয়ারির মধ্যে সামনে উঠে আসবে। তবে ইতোমধ্যে কার্যকর পদক্ষেপগুলো বজায় রাখার গুরুত্বের ওপর জোর দিয়ে ডা. হানস বলেন, সঠিকভাবে মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং সামাজিক জমায়েতে ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির মধ্যে এ অঞ্চলজুড়ে অন্তত দুই লাখ ৮১ হাজার মানুষের জীবন বাঁচানো যেতে পারে। বিধিনিষেধগুলো ‘খুবই প্রয়োজনীয়’ ডা. হানস বলেন, ‘ইউরোপের অনেক দেশে বিধিনিষেধ আরো কঠোর করা হচ্ছে। এটি ভালো, কারণ এসব বিধিনিষেধ এখন খুবই প্রয়োজনীয়।’ ফিল্ড হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা, আইসিইউ শয্যা স্থাপন, এমনকি আরো শয্যা ক্রয়ের পরও ইউরোপের দেশগুলো হাসপাতালের শয্যা নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। সেখানে প্রতিশোধের নেশায় ঝাঁপিয়ে পড়েছে কোভিড-১৯ মহামারির দ্বিতীয় ঢেউ। সংবাদ সংস্থা সিনহুয়া এ খবর জানিয়েছে। ফ্রান্সের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ গতকাল বৃহস্পতিবার জানিয়েছে যে দেশটিতে মহামারি শুরু হওয়ার পর এ প্রথমবারের মতো এক দিনে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা ৩০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ গত বুধবার কমপক্ষে চার সপ্তাহের জন্য প্যারিস এবং আরো আট শহরে রাতের বেলা কারফিউ জারির ঘোষণা দিয়েছেন। নেদারল্যান্ডস গতকাল বৃহস্পতিবার একদিনে নতুন করে সাত হাজার ৮৩৩ কোভিড-১৯ রোগী শনাক্তের তথ্য জানিয়েছে। তার আগের ২৪ ঘণ্টায় এ সংখ্যাটি ছিল সাত হাজার ২৯৬ জন। ইউরোপের আরেক দেশ বেলজিয়াম কর্তৃপক্ষ ৫ থেকে ১১ অক্টোবর পর্যন্ত দৈনিক গড়ে পাঁচ হাজার ৪২১ রোগী শনাক্ত করেছে, যা আগের সপ্তাহের তুলনায় ১০১ শতাংশ বেশি। গত বুধবার বেলজিয়ামে হাসপাতালের এক হাজার ৭৭৭টি শয্যা কোভিড-১৯ রোগীদের দখলে ছিল। গত ৭ অক্টোবর এ সংখ্যাটি ছিল এক হাজার ৫০। বৃদ্ধির হার ৬৯ শতাংশ। ইউরোপে করোনাভাইরাস মহামারির প্রথম ঢেউয়ের সময় মূলকেন্দ্র ছিল ইতালি। সেখানে গতকাল বৃহস্পতিবার নতুন রেকর্ড আট হাজার ৮০৪ জনের সংক্রমণ হয়। আগের দিন এটি ছিল সাত হাজার ৩৩২ জন। এমনকি আয়ারল্যান্ডে এক হাজার ৯৫ নতুন রোগী শনাক্ত হওয়ার তথ্য গত বুধবার জানানো হয়েছে। দেশটিতে মহামারির প্রাদুর্ভাবের পর এটিই এক দিনে সর্বোচ্চ আক্রান্তের রেকর্ড। এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে গতকাল বৃহস্পতিবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ইউরোপবিষয়ক আঞ্চলিক পরিচালক ডা. হানস ক্লোগ নিশ্চিত করেন যে ইউরোপে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৭০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। শুধুমাত্র গত সপ্তাহেই নতুন শনাক্ত হয়েছেন প্রায় সাত লাখ, যা মহামারি শুরুর পর এক সপ্তাহে সর্বোচ্চ কোভিড-১৯ সংক্রমণের ঘটনা।
জেসিন্ডাকে ফের ক্ষমতায় দেখতে চান সিংহভাগ নিউজিল্যান্ডবাসী পূর্ববর্তী

জেসিন্ডাকে ফের ক্ষমতায় দেখতে চান সিংহভাগ নিউজিল্যান্ডবাসী

ট্রাম্প-মেলানিয়ার ছেলেও করোনায় আক্রান্ত পরবর্তী

ট্রাম্প-মেলানিয়ার ছেলেও করোনায় আক্রান্ত

কমেন্ট