উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই চলবে: প্রধানমন্ত্রী

উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই চলবে: প্রধানমন্ত্রী

দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর অবস্থানের কথা পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে এবং অর্জনগুলো সমুন্নত রাখতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই চলবে। একই সঙ্গে নির্বাচনে জনগণের কাছে দেওয়া ওয়াদা পূরণে কাজ করার জন্য কর্মকর্তাদের তাগাদা দিয়েছেন তিনি। গত সোমবার টানা তৃতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার পর গতকাল রবিবার প্রথম নিজ কার্যালয়ে গিয়ে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যদিও কোনো দেশের পক্ষেই শতভাগ দুর্নীতি নির্মূল করা সম্ভব নয়, তবে আমাদের সরকারের একটা দায়িত্ব হলো এই দুর্নীতি প্রতিরোধ করা, যাতে এটি দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করতে না পারে এবং আমাদের সব সাফল্য ম্লান করে না দেয়।’ শেখ হাসিনা জোর দিয়ে বলেন, ‘সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ, দুর্নীতি ও মাদক নির্মূলের ক্ষেত্রে আমাদের যুদ্ধ অব্যাহত থাকবে। তার জন্য আমাদের এই অফিসটা, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দায়িত্ব কিন্তু অনেক বেশি।’ তিনি বলেন, ‘টেন্ডার ছিনতাইয়ের ঘটনা দেশে বারংবার ঘটেছে। কিন্তু আমরা দেশকে এই অবস্থা থেকে মুক্ত করতে পেরেছি। প্রযুক্তির বদৌলতে এই সাফল্য এসেছে এবং এটা ডিজিটাল বাংলাদেশের একটা ভালো ফল।’ সরকারি কর্মকর্তাদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যে ওয়াদা আমরা জাতির কাছে দিয়ে এসেছি, সেটা বাস্তবায়ন করতেই হবে। এটা করতে হলে কাজ করতে হবে। সে জন্য নির্বাচনী ইশতেহারকে আমরা গুরুত্ব দেই। ক্ষমতাটা শুধু চেয়ারে বসে ভোগ করা নয়, এটা জনগণের কাছে দায়িত্ববোধ।’ প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করতেও নিজের কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমি অনুরোধ করব, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে আমরা যে প্রকল্পগুলো গ্রহণ করেছি, সেগুলো বাস্তবায়ন করা বা অন্যান্য ক্ষেত্রে দেশে শান্তি, নিরাপত্তা রক্ষা করা।’ তিনি নিজেও আবার বিভিন্ন মন্ত্রণালয় পরিদর্শন শুরু করবেন বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। সকালে ঢাকা সেনানিবাসে শিখা অনির্বাণে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে স্বাধীনতাযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী সশস্ত্র বাহিনীর শহীদ সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান শেখ হাসিনা। সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে নিজের কার্যালয়ে প্রথম কর্মদিবসের প্রথম ভাগ কাটান প্রধানমন্ত্রী। পরে সেখান থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আসেন তিনি। কার্যালয়ের ক্যাবিনেট কক্ষে প্রধানমন্ত্রীকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তারা। শেখ হাসিনা তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘২১ বছর যারা ক্ষমতায় ছিল, আমরা ১০ বছরে যা উন্নতি করতে পারলাম, তারা কেন তা করতে পারেনি। এ প্রশ্নের উত্তর যখনই খুঁজতে যাই তখনই মনে হয়, আসলে যারা স্বাধীনতাই চায় নাই তারা তো আর দেশের উন্নতি করবে না। করতে চায় না। তাদের কাছে ক্ষমতা ছিল একটা লোভের মতো।’ তিনি বলেন, ‘একটা জাতিকে সামনের দিকে নিয়ে যেতে হলে তার একটা ভিশন থাকতে হবে, দিকনির্দেশনা থাকতে হবে, লক্ষ্য ও পরিকল্পনা থাকতে হবে। সেটা না থাকলে কোনো দেশ এগোতে পারবে না।’ বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার ওপর গুরুত্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাল মিলিয়ে চলতে হলে কোন দেশ উন্নত হলো, উন্নত দেশের দিকে মুখ করে তাকিয়ে থাকলে হবে না। আমাদের নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। আমরা চেষ্টা করব, নিজের পায়ে দাঁড়াব, আমরা আত্মমর্যাদা নিয়ে চলব। অন্য দেশ যদি পারে, আমরা পারব না কেন? আমাদের কিসের অভাব? কোনো অভাব নেই।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের শুধু উদ্যোগের অভাব, উদ্যমের অভাব, কাজ করার অভাব। তো সেই জায়গায়টায় আমরা যখনই এসেছি, দিনরাত পরিশ্রম করেছি। সবাই তো বলছে, আপনারা এত খাটেন কেন? খাটাটা তো আমার নিজের জন্য নয়, খাটি দেশের জন্য, মানুষের জন্য।’ তিনি বলেন, ‘বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে। নতুন নতুন প্রযুক্তি আসছে, প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে। অন্যান্য দেশ অনেক এগিয়ে যাচ্ছে। আমরাও সেইভাবে সমানতালে এগোতে কেন পারব না? সেদিকে লক্ষ রেখেই কিন্তু আমরা প্রত্যেকটা পদক্ষেপ নিয়েছি, পরিকল্পনা নিয়েছি।’ আশু করণীয় বিষয়গুলো ঠিক করার পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘সুপরিকল্পিতভাবে কাজ করতে পারলেই যে একটা অর্জন করা যায়, সেটা আমরা প্রমাণ করেছি।’ দেশকে উন্নয়নের একটা পর্যায়ে নেওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আজকে কিন্তু সেই জায়গায় আমরা এসে গেছি। এত অল্প সময়ের মধ্যে এই যে আমরা উন্নতিটা করে একটা উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতিটা পেয়েছি। উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি ধরে রেখে এগিয়ে যেতে হবে। আমরা আমাদের কাজের মধ্য দিয়ে অন্তত এটুকু বলতে পারি যে আমরা জনগণের আস্থা, বিশ্বাস অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি।’ অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের গণতন্ত্রের বয়স ‘খুবই নতুন’ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘পৃথিবীর বহু দেশে ২০০ থেকে ৩০০ বছর ধরে গণতন্ত্র চর্চা করে আসছে। তাদের ওখানেও কি গোলমাল হয় না? গোলমাল আছে, দ্বন্দ্ব আছে—সবই আছে। আমাদের বিশাল জনগোষ্ঠী। তার পরও আমরা সেই মানুষগুলোকে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। তাদের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করছি।’ এক হয়ে কাজ করা বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য খুবই জরুরি মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘এ দেশের উন্নতি হলে নিজের পরিবার, প্রতিবেশী সকলেরই উন্নতি। তাহলে আমাদের এই দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকবে কেন? অহমিকাবোধ থাকবে কেন? সবাই মিলে কাজ করলে একটা দেশ যদি উঠে আসে, সেটাই করতে হবে।’ আর কখনো যেন স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি রাষ্ট্রক্ষমতায় আসতে না পারে সেই প্রত্যাশা রেখে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারাই আসুক স্বাধীনতার সপক্ষের। স্বাধীনতার চিন্তা-চেতনায় বিশ্বাস করবে। স্বাধীনতার চিন্তা-চেতনায় বিশ্বাস করেই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাঁচজন উপদেষ্টা নিয়োগ পূর্ববর্তী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাঁচজন উপদেষ্টা নিয়োগ

বাংলাদেশের নতুন সরকারের সঙ্গে কাজ করবে জাতিসংঘ পরবর্তী

বাংলাদেশের নতুন সরকারের সঙ্গে কাজ করবে জাতিসংঘ

কমেন্ট