ঋণের সুদ কমাতেই ব্যাংকারদের ছাড়

ঋণের সুদ কমাতেই ব্যাংকারদের ছাড়

বাংলাদেশে কারো অভাবে অনাহারে থাকার দিন শেষ হয়ে গেছে বলে দাবি করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেছেন, অভাব শব্দটা এখন আর এ দেশে নেই। মঙ্গাও উধাও হয়ে গেছে। গ্রামগঞ্জের মানুষ এখন সুখে-শান্তিতে বসবাস করছে। তিনি আরো বলেন, দেশে গরিব মানুষ বাড়ছে না, কমছে। স্বাধীনতার পর দারিদ্র্যের হার ছিল ৭০ শতাংশ, এখন ২২.৪ শতাংশে নেমেছে। তাই ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটকে কোনোমতেই ‘গরিব মারা’ ও ‘ধনীদের তেল দেওয়া’ বাজেট বলা যাবে না। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেন। প্রস্তাবিত বাজেটকে ‘নির্বাচনী বাজেট’ হিসেবে স্বীকার করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমার সব বাজেটই নির্বাচনী বাজেট। আমি একটি রাজনৈতিক দলের সদস্য। বাজেটের মাধ্যমে মানুষকে খুশি রাখার কাজটি তো আমি করবই। শুধু এবারের বাজেট নয়, আগের সব বাজেটেই আমি এ চেষ্টা করেছি।’ সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রীর একপাশে ছিলেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান আর অন্যপাশে ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-এলাহী এবং অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান। বিকেল ৩টায় শুরু হওয়া সংবাদ সম্মেলন চলে পৌনে ৫টা পর্যন্ত। ওই সময় অর্থমন্ত্রীকে সাচিবিক সহায়তা দিতে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. ফজলে কবির, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ড. শামসুল আলম ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব কাজী শফিকুল আযম। প্রস্তাবিত বাজেট ‘বাস্তবায়নযোগ্য’ বলে দাবি করেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘বাজেট দেওয়ার আগে এটা ভেবেই দিই যে বাস্তবায়ন হবে। প্রতিবছর রাজস্ব আয়ে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় একটু ঘাটতি থাকে। অধুনা এই ঘাটতি বেড়েছে। তবে এবার ঘাটতি কমেছে। আগামী অর্থবছর রাজস্ব ঘাটতির পরিমাণ আরো কমে আসবে।’ ঋণের সুদহার কমানোর অঙ্গীকার করা ব্যাংক মালিকদের বাজেটের আগে সিআরআর কমিয়ে সুবিধা দেওয়া হয়েছে। সরকারি আমানতের ৫০ শতাংশ পাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছে সরকার। বাজেটে তাদের করপোরেট কর হার ২.৫ শতাংশ কমানোয় প্রশ্ন তোলেন সাংবাদিকরা। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের করপোরেট করের সর্বোচ্চ হার ৪০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩৭.৫ শতাংশে এনেছি। আন্তর্জাতিকভাবে ৪০ শতাংশ কর অনেক বেশি, তাই। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমানোর জন্য চলতি জুন বা জুলাই মাসে পর্যালোচনা করা হবে বলেও জানান তিনি। এ বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ব্যাংকঋণের সুদের হার এক অঙ্কে নামিয়ে আনার জন্য তাদের করপোরেট করহার কমানো হয়েছে। সুদের হার না কমালে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়ছে। ঋণের সুদ কমলে ব্যবসা-বাণিজ্য ভালো হবে। এর প্রভাব পড়বে অর্থনীতি ও সামাজিক ক্ষেত্রে। এত সব সুবিধা দেওয়ার পরও ব্যাংক মলিকরা ঋণের সুদহার কমাচ্ছেন না। অদূর ভবিষ্যতে ঋণের সুদহার কমে এক অঙ্কে না নামলে এসব সুবিধা প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে কি না, জানতে চাইলে সে প্রশ্নের জবাব দেননি কেউই। ব্যাংকিং কমিশন এখন নয় : চলতি জুন মাসেই ব্যাংকিং কমিশন গঠন করে ব্যাংক খাতের সমস্যা চিহ্নিত করে তা সমাধান করার কথা আগে বলেছিলেন অর্থমন্ত্রী। গতকাল আচমকা সে অবস্থান পাল্টে তিনি বলেন, ‘কমিশন গঠনের কাজ অনেকটুকু করে রেখেছি; কিন্তু এটা এখন আর করব না। আমি যেসব প্রস্তুতি নিয়েছি তা পরবর্তী সরকারকে দিয়ে যেতে চাই। পরবর্তী সরকার কে হবে, তার ওপরই নির্ভর করবে ব্যাংক খাতের সংস্কার।’ মুহিত বলেন, ‘আমাদের ব্যাংক খাতটি আয়তনে অনেক বড় হয়েছে। এর পরও ব্যাংকিং সেবা এখনো দেশের অনেকেই পাননি। আকারে বাড়লেও সেবা সেভাবে বাড়েনি। ব্যাংকিং কমিশন আমি করতে চেয়েছিলাম; কিন্তু সেটা আর করছি না। এ জন্য কাগজপত্র সব তৈরি করে রেখে দিচ্ছি, আগামী সরকারের জন্য। আগামীতে যে সরকার আসবে তার জন্যই এটা রেখে যাচ্ছি।’
রাষ্ট্রীয় ৪৫ প্রতিষ্ঠানের মুনাফা ৯২৯৫ কোটি টাকা, শীর্ষে বিটিআরসি পূর্ববর্তী

রাষ্ট্রীয় ৪৫ প্রতিষ্ঠানের মুনাফা ৯২৯৫ কোটি টাকা, শীর্ষে বিটিআরসি

‘সমৃদ্ধ আগামীর পথযাত্রায় বাংলাদেশ’ প্রত্যয়ে ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকার বাজেট পরবর্তী

‘সমৃদ্ধ আগামীর পথযাত্রায় বাংলাদেশ’ প্রত্যয়ে ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকার বাজেট

কমেন্ট