কক্ষে নিয়ে দরজা আটকে মুখ বেঁধে ফেলে ওসি বলেন, ‘দেখি কোথায় লাগছে?’

কক্ষে নিয়ে দরজা আটকে মুখ বেঁধে ফেলে ওসি বলেন, ‘দেখি কোথায় লাগছে?’

খুলনা রেলওয়ে (জিআরপি) থানার ভেতর ‘গণধর্ষণের শিকার’ নির্যাতিত নারী আদালতে জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছেন, পাঁচ পুলিশ সদস্য মিলে রাতের অন্ধকারে অসংখ্যবার ধর্ষণ করেছেন। এ সময় তিনি যাতে চিৎকার করতে না পারেন, সে জন্য তাঁর মুখ বেঁধে রাখা হয়। গত ৪ আগস্ট খুলনার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে ওই নারী এ জবানবন্দি দেন। বিচারক মো. সাইফুজ্জামান সংশ্লিষ্ট আইনের ৪(১)(ক) ধারা অনুযায়ী জবানবন্দি লিপিবব্ধ করেন। এতে নারীর স্বাক্ষরও রয়েছে। জবানবন্দিতে ওই নারী খুলনা জিআরপি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), সহকারী উপপরিদর্শকসহ (এএসআই) পাঁচ পুলিশ সদস্যের হাতে নির্যাতনের তথ্য দিয়েছেন। ধর্ষণের সময় প্রত্যেকেই জন্মনিরোধক ব্যবহার করেছেন এবং ধর্ষণ শেষে ঘটনাটি কাউকে না বলার জন্যও হুমকি দিয়েছেন। ঘটনা জানাজানি হলে ওই নারীর পরিবারের সদস্যদের মামলায় ফাঁসানোর হুমকিও দেন বলে জবানবন্দিতে উল্লেখ করা হয়েছে। মামলার বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, গত ২ আগস্ট ওই নারী যশোরের বেনাপোল থেকে খুলনা আসার পথে জিআরপি পুলিশের হাতে আটক হন। পরদিন ৩ আগস্ট রেলওয়ে পুলিশের এএসআই লতিকা বিশ্বাস বাদী হয়ে ওই নারীর বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা করেন। তাতে উল্লেখ করা হয়ে, বাদীর কাছ থেকে পাঁচ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়েছে। তারপর তাঁকে মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়। কিন্তু ওই নারীর দেহে ক্ষতচিহ্ন থাকায় আদালত নারীকে আগে চিকিৎসা করানোর জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেন। রেলওয়ে পুলিশ নারীকে খুলনা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা দেয়। তাঁর ভর্তি স্লিপে দেখানো হয়, ‘পাবলিক অ্যাসল্ট।’ চিকিৎসা শেষে ৪ আগস্ট নারীকে পুনরায় আদালতে উপস্থাপন করে খুলনা জিআরপি থানা। তখনই ওই নারী আদালতে পুলিশ হেফাজতে গণধর্ষণের কথা জানান। তখন আদালত নারীর জবানবন্দি নেন। পাশাপাশি পুলিশ সুপারকে ওই নারীর খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলার নির্দেশ দেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত শুক্রবার রাতে আদালতের নির্দেশ মেনে ওই নারী বাদী হয়ে একটি মামলা করেছেন বলে গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন পাকশী রেলওয়ে সার্কেলের পুলিশ সুপার (এসপি) নজরুল ইসলাম। তিনি আরো বলেন, মামলায় ওসি উছমান গণি ও এএসআই নাজমুলের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো তিন পুলিশ সদস্যকে আসামি করা হয়েছে। যদিও এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়নি। থানা হেফাজতে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পর রেলওয়ে পুলিশ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘটনার তদন্তে পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এ ছাড়া এ ঘটনায় এরই মধ্যে ওসি উছমান গনি পাঠান ও এএসআই নাজমুলকে খুলনা জিআরপি থানা থেকে প্রত্যাহার করে পাকশী পুলিশ লাইনে নেওয়া হয়েছে। আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে ‘ভুক্তভোগী’ নারী উল্লেখ করেন, ২ আগস্ট রাতে লুঙ্গি ও গেঞ্জি পরিহিত ডিউটি অফিসার তাঁর চোখ কাপড় দিয়ে বেঁধে একটি কক্ষে নিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে তিনি দেখতে পান, ওসিও লুঙ্গি ও গেঞ্জি পরা। সেখানে তাঁর মুখ কাপড় দিয়ে বেঁধে ফেলা হয়, যাতে কথা বলতে না পারেন। ডিউটি অফিসার কক্ষ থেকে চলে যাওয়ার পর ওসি দরজা বন্ধ করে দেন বলে জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন নারী। তারপর ওসি ওই নারীকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘দেখি কোথায় কোথায় লাগছে?... এ ঘটনা যদি কাউকে কইছো, তাহলে তোর পরিবারের সবগুলোরে একটা পর একটা মামলা দেব।’ মোট দেড় ঘণ্টা ওসি তাঁকে ওই কক্ষে আটকে রাখেন। ওসি চলে যাওয়ার পর ‘মুখে বসন্তের দাগওয়ালা হালকা-পাতলা চিকনা-চাকনা ডিউটি অফিসার’ আসেন। তারপর একে একে পাঁচজন অসংখ্যবার ধর্ষণ করেন বলে ওই নারী আদালতে দাবি করেন। পরে ভোরের আজানের আগে আগে তাঁকে থানার গারদে এনে রাখা হয়। সেখান থেকেই পরদিন মামলা দিয়ে আদালতে পাঠানো হয় ওই নারীকে। জবানবন্দিতে ওই নারী আরো উল্লেখ করেছেন, তিনি তিন সন্তানের জননী। অসুস্থ মাকে দেখতে তিনি সিলেট থেকে খুলনা এসেছিলেন। সেখান থেকে গিয়েছিলেন যশোরে ভাইয়ের বাসায়। সেখান থেকে খুলনায় ফেরার পথে মোবাইল চুরির অভিযোগে ফুলতলা স্টেশন থেকে জিআরপি পুলিশ তাঁকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। রাতেই পুলিশ ওই নারীর স্বজনদের খবর দিয়ে থানায় আনে। জবানবন্দিতে নারী বলেছেন, পুলিশ তখন এক লাখ টাকা উৎকোচ দাবি করে। এ নিয়ে স্বজনদের সঙ্গে পুলিশের রাত ১১-১২টা পর্যন্ত দেনদরবার হয়। এত টাকা দেওয়ার ক্ষমতা নেই জানিয়ে স্বজনরা ফিরে যান। তারপরই গণধর্ষণের ঘটনা ঘটে বলে ওই নারী অভিযোগ করেন।
'পুলিশ' লেখা স্টিকার ব্যবহার করে ফেনসিডিল পাচার, বিজিবির হাতে ধরা পূর্ববর্তী

'পুলিশ' লেখা স্টিকার ব্যবহার করে ফেনসিডিল পাচার, বিজিবির হাতে ধরা

হাজতে নারীকে ধর্ষণ, খুলনার পাঁচ পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা পরবর্তী

হাজতে নারীকে ধর্ষণ, খুলনার পাঁচ পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা

কমেন্ট