বিএনপির সময়ে দেশে খাদ্য ঘাটতি ছিল, এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে দেশ: প্রধানমন্ত্রী
করোনাকালে খাদ্য সংকটে যশোরে বিরল প্রজাতির কালোমুখো হনুমান
যশোরের কেশবপুর উপজেলায় বিরল প্রজাতির কালোমুখো হনুমানের তীব্র খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। বুধবার (২১ এপ্রিল) ভোরে খাবারের খোঁজে কেশবপুর থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে চৌগাছা বাজারসংলগ্ন নিরিবিলি পাড়া এলাকায় দুটি কালোমুখো হনুমান চলে এসেছে। উৎসুক জনতা হনুমান দুটি দেখার জন্য এই মহল্লাতে ভিড় করে। এ সময় হনুমান দুটিকে কিছুটা দুর্বল ও বিমর্ষ দেখাচ্ছিল বলে স্থানীয়রা জানায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কেশবপুর ও পার্শ্ববর্তী এলাকা বালিয়াডাঙ্গা, ব্রহ্মকাঠি, রামচন্দ্রপুর, দুর্গাপুর, সাবদিয়া, মজিদপুর এলাকায় সাড়ে ৪০০ থেকে ৫০০ হনুমান বসবাস করছে। তবে কেশবপুর পশু হাসপাতাল ও খাদ্যগুদাম এলাকায় তাদের বেশি দেখা যায়। মহাকবি মাইকেল মধুসূদনের স্মৃতিবিজড়িত সাগরদাড়ি দেখতে সারাবছর কমবেশী পর্যটকরা আগমন করেন। পর্যটকদের দেওয়া খাবারেই এসব হনুমানের জীবনচলত। কিন্তু সম্প্রতি করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ধাপের প্রাদুর্ভাবের কারণে হনুমান অধ্যুষিত এলাকায় পর্যটকের আগমন বন্ধ। ফলে চরমভাবে দেখা দিয়েছে খাদ্য সংকট।
আজ ভোরে খাবারের খোঁজে চৌগাছার নিরিবিলি পাড়ায় চলে আসা হনুমান দুটিকে এপাড়ায়-ওপাড়ায় ঘোরাফেরা করতে দেখা গেছে।
নিরিবিলি পাড়ার বাসিন্দা রুবেল দেওয়ান জানান, ভোরে হনুমান দুটি মোবাইল টাওয়ারে ছিল। সকাল ৮টার দিকে এলাকায় ঘোরাফেরা করতে দেখা গেছে। এ সময় এলাকার মানুষ কলা খেতে দেয়। তিনি বলেন, হনুমান দুটিকে বিষণ্ন দেখা গেছে।
কেশবপুরের সিনিয়র সাংবাদিক মোতাহার হোসেন জানান, 'এ অঞ্চলে একসময় ফলদ ও বনজ বৃক্ষ থাকায় হনুমানের খাবারের কোনো অভাব ছিল না। কিন্তু পরবর্তী সময়ে এসব গাছ কেটে ফেলায় খাদ্যের অভাব দেখা দেয়'।
তিনি আরো বলেন, ২০০৫ সালে প্রাণী সংরক্ষণ ও সরকারিভাবে খাদ্য সরবরাহের দাবিতে স্থানীয়ভাবে আন্দোলন গড়ে ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সরকারিভাবে হনুমানদের জন্য খাদ্য হিসেবে কলা, বাদাম ও পাউরুটি সরবরাহ করা হয়। অনুকূল পরিবেশ থাকায় প্রজননের ফলে হনুমানের সংখ্যা বাড়তে থাকে। কিন্তু সে তুলনায় খাদ্য সরবরাহ বাড়েনি। সে কারণে বিচ্ছিন্ন হয়ে খাবারের সন্ধানে নানা অঞ্চলে চলে যাচ্ছে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা প্রভাষ চন্দ্র গোস্বামী জানান, কালোমুখো হনুমান খুবই বিরল প্রজাতির। যা কেশবপুর অঞ্চলে দেখা মেলে। তিনি বলেন, মূলত খাবার সংকটের কারণেই হনুমানগুলো লোকালয়ে ঢুকে পড়ে। ফলে জীবনের ঝুঁকিতে পড়ে প্রাণীগুলো। দেখা গেছে বৈদ্যুতিক তার, সড়ক দুর্ঘটনা ও মানুষের অত্যাচারে প্রাণীগুলো মারা পড়ার ঝুঁকি থাকে।
তিনি বলেন, মানুষের দেওয়া খাবার দিলেই হবে না। অভায়ারণ্য তৈরি করতে হবে। কেশবপুর অঞ্চলে আগে ঘন জঙ্গল বা বনাঞ্চল ছিল। এখন তেমনটি নেই। মনে রাখা দরকার এগুলো বন্যপ্রাণী। বনাঞ্চল তৈরি বা সেই পরিবেশ সৃষ্টি করতে না পারলে প্রাণীগুলো বিপন্ন গওয়া থেকে রক্ষা করা যাবে না।
কমেন্ট