টাকা পায়নি ডেসটিনির ৪৫ লাখ গ্রাহকের কেউ

টাকা পায়নি ডেসটিনির ৪৫ লাখ গ্রাহকের কেউ

আট বছরেও নিষ্পত্তি হয়নি মাল্টি লেভেল মার্কেটিং পদ্ধতি অনুসরণ করে দেশে ব্যবসা পরিচালনা করা কোম্পানি ডেসটিনির বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার। দীর্ঘদিন ধরে কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও কোম্পানিটির বিভিন্ন স্কিমে অর্থলগ্নীকারী কাউকে কোনো টাকাও ফেরত দেয়নি ডেসটিনি। কোম্পানির হিসাব, ক্রেতা-পরিবেশক ও বিনিয়োগকারী মিলে তাদের গ্রাহক সংখ্যা প্রায় অর্ধকোটি (৪৫ লাখ)। চার বছর আগে গ্রাহকদের বিনিয়োগ ও পাওনা বুঝিয়ে দেয়ার একটি উপায় বের করেছিলেন আদালত। তবে তা কার্যকর কোনো ফল এনে দিতে পারেনি। এদিকে গ্রাহকদের টাকা বুঝিয়ে দেয়ার কোনো উদ্যোগ না নিলেও তাদের জামিনের চেষ্টা চলছে লাগাতার। ২০১২ সালের ৩১ জুলাই ঢাকার কলাবাগান থানায় ডেসটিনি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল আমীন এবং ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসাইনসহ ৫৩ জনের বিরুদ্ধে দুটি আলাদা মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ওই মামলায় এখনও গ্রেফতার আছেন রফিকুল আমীন এবং মোহাম্মদ হোসাইন। এর আগে দুদকের দায়ের করা মামলায় তাদের জামিন আবেদন দুবার খারিজ হয়েছে। অল্পদিনের মধ্যে আবারও তাদের জামিন চাওয়া হবে-এমন প্রস্তুতি নেয়ার কথা জানা গেছে দুদক সূত্রে। ডেসটিনির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্নের শর্তে ২০১২ সালের ১৮ অক্টোবর থেকে জামিনে আছেন ওই মামলায় গ্রেফতার ডেসটিনি গ্রুপের প্রেসিডেন্ট সাবেক সেনাপ্রধান হারুন-অর-রশীদ। রফিকুল আমীন ও মোহাম্মদ হোসাইনের জামিনের শর্ত জুড়ে রেখেছেন আদালত। শর্ত হলো যদি ৬ সপ্তাহের মধ্যে ৩৫ লাখ গাছ বিক্রি করে ২ হাজার ৮০০ কোটি টাকা অথবা নগদ আড়াই হাজার কোটি টাকা সরকারের কাছে জমা দেয়া হয় তাহলে তারা জামিন পাবেন। এটা বহাল থাকলেও কোনো টাকা সরকারের কোষাগারে জমা পড়েনি বলে জানা গেছে। আর এজন্য তাদের জামিনও মিলছে না। এ শর্ত না মেনে জামিন চাওয়ায় এর আগে আদালত বিব্রতও হয়েছেন। তবে গ্রেফতারের পর থেকে অসুস্থতার কথা বলে বেশির ভাগ সময়ই হাসপাতালে থাকছেন এমডি রফিকুল আমীন। এখনো তিনি হাসপাতালে। মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে দায়ের করা দুটি মামলার একটিও নিষ্পত্তি হয়নি এই দীর্ঘ সময়ে। দুদকের তথ্য একটি মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ শেষের দিকে। তবে আরকেটির সাক্ষ্য গ্রহণ এখনও শুরুর দিকে। সরকারের বিভিন্ন তদন্ত প্রতিবেদনের তথ্য, এমএলএম পদ্ধতিতে ডেসটিনি তাদের গ্রাহকদের ৪ হাজার ১১৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। এর মধ্যে ৯৬ কোটি টাকা পাচার করারও অভিযোগ রয়েছে। ২০০০ সাল থেকে এই ব্যবসা চালিয়ে ২০১২ সালে মামলার কবলে পড়ে বন্ধ হয় কোম্পানিটির কার্যক্রম। এরপর ডেসটিনির পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে নানা কর্মসূচি পালন করেছে এর গ্রাহকরা। তবে, ‘ক্ষতিগ্রস্তদের’ কেউ কোন টাকা বুঝে পাননি। কতদিনে পাবেন বা আদৌ পাবেন না মামলার রায় না হওয়া পর্যন্ত তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। কলাবাগান থানায় মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে করা মামলায় অভিযোগ আনা হয়, সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ থেকে ৩ হাজার ২৮৫ কোটি টাকা অন্যত্র স্থানান্তর করেন ডেসটিনির কর্তাব্যক্তিরা। দুই বছরের বেশি সময় ধরে তদন্ত শেষে দুদক মামলার অভিযোগপত্র দেয় ২০১৪ সালের ৫ মে। রাজধানীর কলাবাগান থাকায় দায়ের করা মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০০৬ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ডেসটিনি ট্রি প্ল্যান্টেশনের নামে ৮১ লাখ গাছ লাগানোর কথা বলে মোট ২ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে। এর মধ্যে প্রায় ৩শ' কোটি টাকা গাছের বিপরীতে সংগ্রহ করছে। বাকি ২ হাজার ৩৭ কোটি টাকা সংগ্রহ করা হয়েছে গাছ না লাগিয়েই। গ্রুপের প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অভ্যন্তরীণ চুক্তি অনুযায়ী, ট্রি প্ল্যান্টেশনের কমিশন বাবদ ১ হাজার ৩৮৯ কোটি টাকা সরিয়ে নেয়া হয়েছে। ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের (ডিএমসিএসএল) মোট সম্পদের পরিমাণ ৩ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা। গ্রাহকদের কাছ থেকে ১ হাজার ৯০১ কোটি টাকা সংগ্রহ করে সেখান থেকে ১ হাজার ৮৬১ কোটি টাকা সরিয়ে নেয়া হয়েছে। লভ্যাংশ, সম্মানী ও বেতন-ভাতার নামে এ টাকা সরানো হয়।
শতকোটি টাকার সম্পদ ওসি প্রদীপ কুমারের পূর্ববর্তী

শতকোটি টাকার সম্পদ ওসি প্রদীপ কুমারের

টেকনাফ থানার ওসিসহ ৯ পুলিশের বিরুদ্ধে সিনহার বোনের মামলা পরবর্তী

টেকনাফ থানার ওসিসহ ৯ পুলিশের বিরুদ্ধে সিনহার বোনের মামলা

কমেন্ট