দর্শনার্থীদের ভিড় বাড়ছে ষাটগম্বুজ মসজিদে

দর্শনার্থীদের ভিড় বাড়ছে ষাটগম্বুজ মসজিদে

করোনা পরিস্থিতিতে প্রায় ৬ মাস পর খুলে দেয়া হয়েছে বিশ্ব ঐতিহ্য ষাটগম্বুজ মসজিদ। এতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা দর্শনার্থীরা উপভোগ করছেন ষাটগম্বুজ মসজিদের স্থাপত্যশৈলী। তবে থাকা এবং খাওয়ার জন্য মানসম্মত হোটেল-রেস্তোঁরা না থাকায় ভোগান্তিতে পড়া দূর থেকে আসা দর্শনার্থীরা এসব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন। দেশে বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত বাংলাদেশের তিনটি দর্শনীয় স্থানের মধ্যে দু'টিই বাগেরহাট জেলায়। একটি বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন এবং প্রায় সাড়ে ৬'শ বছর আগে নির্মিত ষাটগম্বুজ মসজিদ। করোনা পরিস্থিতিতে দীর্ঘ ছয় মাস বন্ধ ছিল ষাটগম্বুজ মসজিদ। এখনও দর্শনীর্থীদের বন্ধই রয়েছে সুন্দরবন। গত ১৬ সেপ্টেম্বর দর্শনার্থীদের জন্য মসজিদটি খুলে দেয়া হয়। এরপর থেকে প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শনার্থীরা ভিড় করছেন মসজিদ এলাকায়। তাদের অভিযোগ, পর্যটন এলাকা হিসেবে হোটেল-মোটেল, রেস্তোঁরা, অন্যান্য অবকাঠামো গড়ে না ওঠায় পড়তে হয় নানা বিড়ম্বনায়। দর্শনার্থীদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করছে বলে জানান বাগেরহাট টুরিস্ট পুলিশের উপ-পরিদর্শক আল মামুন। আর বাগেরহাটকে বিশ্ব ঐতিহ্যের দু'টি স্থাপনার অপূর্ব মেলবন্ধন হিসেবে তুলে ধরেন বাগেরহাট প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের কাস্টোডিয়ান গোলাম ফেরদাউস। এদিকে, দর্শনার্থীদের সুবিধায় জেলার পর্যটন শিল্পকে এগিয়ে নিতে বিভিন্ন পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে বলে জানালেন জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ। দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেয়ার পর থেকে দশদিনে সাড়ে ৬ হাজার দর্শণার্থী এসেছেন ষাটগম্বুজ মসজিদে। ষাট গম্বুজ মসজিদ: বাংলাদেশের বাগেরহাট জেলার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত একটি প্রাচীন মসজিদ। মসজিদটির গায়ে কোনো শিলালিপি নেই। তাই এটি কে নির্মাণ করেছিলেন বা কোন সময়ে নির্মাণ করা হয়েছিল সে সম্বন্ধে সঠিক কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। তবে মসজিদটির স্থাপত্যশৈলী দেখলে এটি যে খান জাহান আলী নির্মাণ করেছিলেন সে সম্বন্ধে কোনো সন্দেহ থাকে না। ধারণা করা হয়, তিনি ১৫শ' শতাব্দীতে এটি নির্মাণ করেন। এ মসজিদটি বহু বছর ধরে ও বহু অর্থ খরচ করে নির্মাণ করা হয়েছিল। পাথরগুলো আনা হয়েছিল রাজমহল থেকে। এটি বাংলাদেশের তিনটি বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের একটি; এই মসজিদটির জন্য বাগেরহাট শহরটিকেই বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের মর্যাদা দেয়া হয়েছে। ১৯৮৫ খ্রিষ্টাব্দে ইউনেস্কো এই সম্মান দেয়। মসজিদটি উত্তর-দক্ষিণে বাইরের দিকে প্রায় ১৬০ ফুট ও ভিতরের দিকে প্রায় ১৪৩ ফুট লম্বা এবং পূর্ব-পশ্চিমে বাইরের দিকে প্রায় ১০৪ ফুট ও ভিতরের দিকে প্রায় ৮৮ ফুট চওড়া। দেয়ালগুলো প্রায় ৮ দশমিক ৫ ফুট পুরু। ষাট গম্বুজ মসজিদে গম্বুজের সংখ্যা মোট ৮১টি, সাত লাইনে ১১টি করে ৭৭টি এবং চার কোনায় ৪টি মোট ৮১টি। গম্বুজগুলোর নকশা গোলাকার এবং উপরের দিকে সরু হয়ে গেছে। গম্বুজের কার্ণিশের কাছে বলয়াকার ব্যান্ড ও চূঁড়ায় গোলাকার গম্বুজ আছে। মিনারগুলোর উচ্চতা, ছাদের কার্নিশের চেয়ে বেশি। সামনের দু'টি মিনারে প্যাঁচানো সিঁড়ি আছে এবং এখান থেকে আজান দেবার ব্যবস্থা ছিল। এদের একটির নাম রওশন কোঠা, অপরটির নাম আন্ধার কোঠা। মসজিদের ভেতরে ৬০টি স্তম্ভ বা পিলার আছে। এগুলো উত্তর থেকে দক্ষিণে ৬ সারিতে অবস্থিত এবং প্রত্যেক সারিতে ১০টি করে স্তম্ভ আছে। প্রতিটি স্তম্ভই পাথর কেটে বানানো, শুধু ৫টি স্তম্ভ বাইরে থেকে ইট দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছে। এই ৬০টি স্তম্ভ ও চারপাশের দেয়ালের ওপর তৈরি করা হয়েছে গম্বুজ। মসজিদটির নাম ষাট গম্বুজ (৬০ গম্বুজ) মসজিদ হলেও এখানে গম্বুজ মোটেও ৬০টি নয়। ৭৭টি গম্বুজের মধ্যে ৭০টির উপরিভাগ গোলাকার এবং পূর্ব দেয়ালের মাঝের দরজা ও পশ্চিম দেয়ালের মাঝের মিহরাবের মধ্যবর্তী সারিতে যে সাতটি গম্বুজ সেগুলো দেখতে অনেকটা বাংলাদেশের চৌচালা ঘরের চালের মতো। মিনারে গম্বুজের সংখ্যা ৪টি; এ হিসেবে গম্বুজের সংখ্যা দাঁড়ায় মোট ৮১তে। তবুও এর নাম হয়েছে ষাটগম্বুজ। ঐতিহাসিকরা মনে করেন, সাতটি সারিবদ্ধ গম্বুজ সারি আছে বলে এ মসজিদের নাম সাত গম্বুজ এবং তা থেকে ষাটগম্বুজ নাম হয়েছে। আবার অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন, গম্বুজগুলো ৬০টি প্রস্তরনির্মিত স্তম্ভের ওপর অবস্থিত বলেই নাম ষাটগম্বুজ হয়েছে। মসজিদের ভেতরে পশ্চিম দেয়ালে ১০টি মিহরাব আছে। মাঝের মিহরাবটি আকারে বড় এবং কারুকার্যমণ্ডিত। এ মিহরাবের দক্ষিণে ৫টি ও উত্তরে ৪টি মিহরাব আছে। শুধু মাঝের মিহরাবের ঠিক পরের জায়গাটিতে উত্তর পাশে যেখানে ১টি মিহরাব থাকার কথা সেখানে আছে ১টি ছোট দরজা। কারো কারো মতে, খান-ই-জাহান এই মসজিদটিকে নামাজের কাজ ছাড়াও দরবার ঘর হিসেবে ব্যবহার করতেন, আর এই দরজাটি ছিল দরবার ঘরের প্রবেশ পথ। আবার কেউ কেউ বলেন, মসজিদটি মাদরাসা হিসেবেও ব্যবহৃত হত। ইমাম সাহেবের বসার জায়গা হিসেবে রয়েছে মিম্বার।
পেটে ৩১ প্যাকেট ইয়াবা, ফেটে গিয়ে মাদক ব্যবসায়ীর মৃত্যু পূর্ববর্তী

পেটে ৩১ প্যাকেট ইয়াবা, ফেটে গিয়ে মাদক ব্যবসায়ীর মৃত্যু

মাটির ঘর ভেঙে বাবা-মা ও দুই ছেলের মৃত্যু পরবর্তী

মাটির ঘর ভেঙে বাবা-মা ও দুই ছেলের মৃত্যু

কমেন্ট