দেহে অ্যান্টিবডি না থাকলেও সংক্রমণ ঠেকানো যাবে!

দেহে অ্যান্টিবডি না থাকলেও সংক্রমণ ঠেকানো যাবে!

একবার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে তা থেকে সেরে উঠতেই দেহে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়ে যায়। তখন আপনি ভাইরাস-প্রতিরোধী হয়ে যাবেন। তার আগে নয়। কিন্তু নতুন এক জরিপে দেখা যায়, যাদের দেহে করোনাভাইরাসের অ্যান্টিবডি পাওয়া যায়নি, তাদের দেহেও এ ভাইরাস প্রতিরোধের অন্তত খানিকটা ক্ষমতা থাকে। সেই ক্ষমতা কোথা থেকে আসে? এ ব্যাপারে সুইডেনের কারোলিনস্কা ইন্সটিটিউটের গবেষকরা বলছেন, তা আসে ‘টি-সেল’ নামে রক্তে থাকা এক ধরনের কোষ থেকে। যার কাজ দেহকোষে সংক্রমণ হলেই তাকে আক্রমণ করে ধ্বংস করা। অ্যান্টিবডি কী? করোনাভাইরাস প্রতিরোধ ক্ষমতার গবেষণায় এতদিন বেশি মনোযোগ দেয়া হয়েছে অ্যান্টিবডির দিকেই। ‘এটা হচ্ছে ইংরেজি ওয়াই অক্ষরের মতো দেখতে একটা প্রোটিন। যা ঠিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়ে একটা লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস করার মতোই কাজ করে” - বলছেন জরিপ রিপোর্টের অন্যতম প্রণেতা সহকারী অধ্যাপক মার্কাস বাগার্ট। করোনাভাইরাস মানুষের দেহকোষে ঢোকার আগেই এই অ্যান্টিবডিটা ভাইরাসের সাথে আটকে গিয়ে তাকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। আর যদি অ্যান্টিবডি এটা করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে করোনাভাইরাস দেহকোষের মধ্যে ঢুকে পড়ে এবং সেটা আরও ভাইরাস তৈরির কারখানায় পরিণত করে। টি সেল কী? টি সেল কাজ করে একটু অন্যভাবে। যারা ইতোমধ্যেই করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের সংক্রমিত দেহকোষগুলো টার্গেট করে এবং সেগুলোকে পুরোপুরি ধ্বংস করে ফেলে টি-সেল। ফলে ভাইরাস সংক্রমণ থেকে অন্য সুস্থ কোষ আর আক্রান্ত হতে পারে না। বিজ্ঞানীরা বলছেন, টি-সেলের এক ধরনের “স্মৃতিশক্তি” আছে। টি-সেল ভাইরাসটিকে চিনতে পারলেই, ভাইরাস যে কোষগুলোকে সংক্রমিত করেছে তা টার্গেট করে এবং সেগুলো ধ্বংস করতে থাকে। জরিপটি চালানো হয় ২০০ লোকের ওপর । তাদের দেহে অ্যান্টিবডি এবং টি-সেল দুটোই আছে কিনা, সেটাই এই জরিপে পরীক্ষা করা হয়েছিল। জরিপে দেখা যাচ্ছে, প্রতি একজন অ্যান্টিবডি-বিশিষ্ট ব্যক্তির বিপরীতে দু‌’জন করে লোক পাওয়া যাচ্ছে যাদের রক্তে এমন টি-সেল আছে। যা সংক্রমিত দেহকোষ চিহ্নিত করে তা ধ্বংস করে ফেলতে পারে। এর মধ্যে এমন লোকও আছে যারা কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়েছেন কিন্তু তাদের উপসর্গ ছিল খুবই মৃদু বা আদৌ কোন উপসর্গ দেখা যায়নি। লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজের অথ্যাপক ড্যানি অল্টম্যান বলছেন, “এটা একটা চমৎকার জরিপ। যাতে আবারও প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে যে, মানুষের করোনাভাইরাস-প্রতিরোধ ক্ষমতার ব্যাপারটা শুধু অ্যান্টিবডি টেস্ট দিয়ে বোঝা সম্ভব নয়।” অনেক কিছুই এখনও অজানা তবে এই বিজ্ঞানীরা বলছেন, টি-সেল করোনাভাইরাসকে সম্পূর্ণ আটকে দিতে পারে কিনা- এটা এখনও অজানা। এটা জানার জন্য জন্য আরও বিশ্লেষণের প্রয়োজন হবে। গুরুতর অসুস্থ ৬০ জন রোগীর ওপর এক গবেষণা চালিয়েছেন ফ্রান্সিস ক্রিক ইনস্টিটিউট, কিংস কলেজ লন্ডন এবং গাইজ এ্যান্ড সেন্ট টমাস হসপিটাল। তারা দেখেছেন, গুরুতর অসুস্থ রোগীর দেহে টি-সেলের সংখ্যা ব্যাপকভাবে কমে যায়। অন্যদিকে কারোলিনস্কা ইনস্টিটিউটের জরিপে কিন্তু দেখা গেছে, কোভিড-১৯ রোগীরা যত বেশি অসুস্থ, তাদের দেহে অ্যান্টিবডি এবং টি-সেল ততই বেশি। এই দলটি বলছে, এ ব্যাপারে আরও গবেষণা দরকার। উল্লেখ্য, টি-সেল হলো অত্যন্ত জটিল। বিশেষ ধরনের ল্যাবরেটরি ছাড়া এ গবেষণা করা যায় না। তবে মানবদেহে টি-সেল উৎপাদন বাড়ায় এমন একটি ওষুধ হচ্ছে ইন্টারলিউকিন-সেভেন। এটি করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীকে সেরে উঠতে সাহায্য করে কিনা, তা বর্তমানে যুক্তরাজ্যে পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।
বাতাসে করোনা ছড়াতে পারে ১৩ ফুট দূরেও, মাস্ক আবশ্যক পূর্ববর্তী

বাতাসে করোনা ছড়াতে পারে ১৩ ফুট দূরেও, মাস্ক আবশ্যক

রাখালের করোনা ৪৭ ছাগল ভেড়া কোয়ারেন্টিনে পরবর্তী

রাখালের করোনা ৪৭ ছাগল ভেড়া কোয়ারেন্টিনে

কমেন্ট