নাইটগার্ড থেকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক
সারা দিন কলেজ, ক্লাস, পড়াশোনা। রাতে গার্ডের কাজ। এভাবেই জীবনের বেশ কয়েকটি বছর কেটেছে রঞ্জিত রামাচন্দ্রনের। ভারতের কেরালার কাসাড়গড়ের ছিপছিপে চেহারার ছেলেটি এখন আইআইএম রাঁচির সহকারী অধ্যাপক। ত্রিপলে ঢাকা ছোট্ট একটি কুঁড়েঘর থেকে দেশের অন্যতম সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অধ্যাপক। নিজের জীবনের এই লড়াইয়ের কাহিনি ফেসবুকে লেখেন রঞ্জিত। সঙ্গে তাঁর পৈতৃক ভিটার ছবি। তাঁর এই অনুপ্রেরণার কাহিনি ভাইরাল সোশ্যাল মিডিয়ায়।
দ্বাদশ শ্রেণি পাসের পরই অর্থাভাবে পড়াশোনা ছেড়ে দেবেন—এমনটাই ভেবেছিলেন রঞ্জিত। কারণ পরিবারকে টানতে একটি চাকরি সত্যি প্রয়োজন। কিন্তু চাকরি করতে করতে তো আর পড়ার সময় পাবেন না। এমন সময়েই মেলে দুটিই করার সুযোগ। পানাথুরে বিএসএনএলের টেলিফোন এক্সচেঞ্জে নাইট গার্ডের চাকরি জুটিয়ে ফেলেন তিনি। ব্যস, এর পরই শুরু হয় আসল লড়াই। নাইট গার্ডের কাজের মাঝেই সারা রাত পড়াশোনা করতেন। আর দিনে পিউস এক্স কলেজে অর্থনীতিতে স্নাতকের ক্লাস করতে থাকেন।
এভাবেই কেটে যায় তিনটি বছর। এরপর ধাপে ধাপে কেরালা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি ও আইআইটি মাদ্রাজে পড়াশোনা চালিয়ে যান। দুর্দান্ত নম্বরের ফলে ভর্তি হওয়া নিয়ে কোনো সমস্যা হয়নি তাঁর। আর পড়াশোনার খরচ নিজেই চালাতেন কষ্ট করে।
এভাবেই ধীরে ধীরে পিএইচডি সারেন। তত দিনে তিনি বৃত্তিও পেতে শুরু করেন। ফলে আর ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। গবেষণা শেষে অধ্যাপনা শুরু করেন বেঙ্গালুরুর ক্রাইস্ট ইউনিভার্সিটিতে। এর পরেই আসে আইআইএম রাঁচিতে অর্থনীতিতে অধ্যাপনার সুযোগ।
রঞ্জিত লিখেছেন, ‘ওই ছোট্ট কুঁড়েঘর থেকে আইআইএম রাঁচির পথটি ছিল দুর্গম; কিন্তু স্বপ্নে ঘেরা। আমায় মা-বাবা কখনো বলেননি কী করতে হবে। আমি পরের পর যেটা মনে হয়েছে করে গিয়েছি। আমার এই কাহিনি শুনে যদি কারো মনোবল বাড়ে, তবে নিজেকে সার্থক মনে করব।’
কমেন্ট