‘বন্ধ হয়ে গেল শান্তি স্থাপনের প্রায় সব পথ’

‘বন্ধ হয়ে গেল শান্তি স্থাপনের প্রায় সব পথ’

জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাসের দুয়ার খুলেছে গতকাল। আর বন্ধ হয়ে গেছে দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের মাধ্যমে ওই অঞ্চলের শান্তি স্থাপনের প্রায় সব পথ। গতকাল ভারতের টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক বিশ্লেষণে এমনটাই বলা হয়। এতে বলা হয়, তেল আবিব থেকে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস জেরুজালেমে সরানোর সিদ্ধান্তের বিরোধিতা শুরু থেকেই ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ছিল। তবে এ বিরোধিতা কতটা তীব্র, তা গতকাল প্রমাণ হয়ে যায় কাতারে গাজাবাসীর মৃত্যু থেকে। দূতাবাস খোলার খবরকে ম্লান করে দেয় বিক্ষোভে ইসরায়েলি গুলিতে নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই একতরফা ও হঠকারী সিদ্ধান্ত মধ্যপ্রাচ্যে যে আগুন জ্বেলেছে সময়ের সঙ্গে তা আরো ছড়াবে, বাড়বে। কারণ যে ইস্যু নিয়ে বিবাদ তার নাম জেরুজালেম। যার পূর্বাংশে নিজেদের রাজধানী করার স্বপ্ন দেখে ফিলিস্তিনিরা। যুক্তরাষ্ট্রের আস্কারায় পুরো জেরুজালেমকেই রাজধানী করার ঘোষণা দিয়ে রেখেছে ইসরায়েল। ট্রাম্পও বলে রেখেছেন, ভবিষ্যৎ শান্তি আলোচনায় জেরুজালেম নিয়ে আর কোনো কথা হবে না। জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী স্বীকৃতি দিয়ে ইস্যুটিকে আলোচনার টেবিল থেকে তুলে নিয়েছেন তিনি। জেরুজালেমের কূটনৈতিক মর্যাদা বিশ্বের সবচেয়ে বিতর্কিত বিষয়গুলোর একটি। যুক্তরাষ্ট্র বাদে বাকি বিশ্ব আশা করে, ফিলিস্তিন-ইসরায়েল আলোচনায় এ বিতর্কের সুরাহা হবে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা পদক্ষেপের পর পরিস্থিতি এবং অঞ্চল—দুই-ই চরম অনিশ্চয়তায় তলিয়ে গেছে। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গাজা ও পশ্চিম তীরে গত ৩০ মার্চ যে বিক্ষোভ শুরু হয় তাতে মৃতের সংখ্যা শতাধিক। আজ ১৫ মে দেড় মাসের এই বিক্ষোভ শেষ হওয়ার কথা। মুসলিম, খ্রিস্টান ও ইহুদি—তিন ধর্মের মানুষের জন্যই জেরুজালেম অত্যন্ত পবিত্র একটি নগরী। ১৯৪৭ সালে তৎকালীন ব্রিটিশশাসিত ফিলিস্তিনের জাতিসংঘ প্রণীত বিভাজন পরিকল্পনায় জেরুজালেমকে বিশেষ আন্তর্জাতিক শহরের মর্যাদা দেওয়া হয়। যার বাস্তবায়ন কোনো কালেই সম্ভব হয়নি। পরের বছর মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধে ইসরায়েল শহরটির পশ্চিমাংশ দখল করে। ১৯৬৭ সালের ছয় দিনের লড়াইয়ে দখল করে পূর্বাংশ। ১৯৮০ সালে পুরো জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী ঘোষণা করে দখলদারি বাড়াতে থাকে। যার একটি ক্ষুদ্র নজির হলো, গতকাল যে ভবনে মার্কিন দূতাবাস উদ্বোধন করা হয়েছে, সেটিও এক ফিলিস্তিনির জমি দখল করে বানানো। আন্তর্জাতিকভাবে ইসরায়েলের এসব দখলদারি কখনোই অনুমোদন পায়নি। জাতিসংঘও দফায় দফায় প্রস্তাব পাস করে একে অকার্যকর ও বাতিল বলে রায় দিয়েছে। তবে তাতে ইসরায়েলের দখলদারি বন্ধ হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপের বিরুদ্ধে আরব দেশগুলোও তেমন জোরালো আওয়াজ তোলেনি। পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে, এমন সতর্কতা প্রকাশের মধ্য দিয়েই দায়িত্ব এড়িয়ে গেছে তারা। যদিও ইরসায়েলি এই সংকটের কারণেই সশস্ত্র মুসলিম প্রতিরোধের সূচনা হয়। জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস সরানোর ব্যাপারে কংগ্রেস প্রথম সিদ্ধান্ত নেয় ১৯৯৫ সালে। এর পর থেকে তিনজন প্রেসিডেন্ট এসেছেন এবং বিদায় নিয়েছেন, কিন্তু দূতাবাস সরাননি। ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল এটি। তাঁর ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স এবং তাঁরই নিয়োগ দেওয়া ইসরায়েলে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডেভিড ফ্রিডম্যানও সম্ভবত বিষয়টি নিয়ে চাপ তৈরি করে থাকবেন। ফলে গত ডিসেম্বরে ট্রাম্প সদর্পে ঘোষণা দেন, ‘কেউ পারেনি। তাদের সাহস ছিল না। আমি পেরেছি।’ ট্রাম্পের এই দর্প মধ্যপ্রাচ্যকে কতটা অস্থিতিশীল করেছে তার রক্তাক্ত নজির গতকাল দূতাবাস খোলার প্রথম দিনই স্পষ্ট হয়ে গেছে। তারও আগে শান্তি আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতা বাতিল করে দেন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। আর মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে গতকাল এ কাতারে যোগ দিয়েছে তুরস্ক।
গাজায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৫৮ পূর্ববর্তী

গাজায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৫৮

লন্ডনের প্রথম নারী ধর্মযাজক তিনি! পরবর্তী

লন্ডনের প্রথম নারী ধর্মযাজক তিনি!

কমেন্ট