বোরোর দুঃখ ভোলাচ্ছে আমন

বোরোর দুঃখ ভোলাচ্ছে আমন

পর পর তিনদফা বন্যায় বোরো ফসল হারিয়ে হতাশাগ্রস্ত সিলেটের কৃষক-কৃষাণীর মুখে হাসি ফিরিয়েছে আমন ধান। বন্যা পরবর্তী কৃষকরা আমন চাষে মনোযোগী হওয়ায় ও প্রকৃতির আনুকূল্য পাওয়ায় এবার আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে সোনালি আমন ঘরে তোলার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন কৃষাণ-কৃষাণীরা। আনন্দ আর উৎসাহ নিয়ে আমন ধান কাটা চলছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, খরা, ধানের চিঠাসহ বিভিন্ন ধরনের দুর্যোগ এবার আমন ফসলের মাঠে হানা না দেওয়ায় বছরান্তে চাল কিনে খাওয়ার হতাশা ফুরাচ্ছে না তাদের। হেমন্তের শুরুতে কুয়াশাছন্ন সকালে সিলেটের সকল হাওর-বাওড়গুলোতে নতুন ধানের ঘ্রাণে মৌ মৌ করছে। কেউ কেউ মাঠের সোনালি ফসল ঘরে তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আবার কোথাও কোথাও শুরু হয়েছে ধান কাটা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতা, সঠিক সময়ে বৃষ্টিপাত, কৃষকদের অদম্য অনুপ্রেরণা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও ধানের রোগবালাই কম থাকায় এ বছর ধানের ভালো ফলন হয়েছে বলে সকলের ধারণা। অকাল বন্যায় সিলেট বিভাগের বোরো ধান তলিয়ে যাওয়ার পর কৃষকরা দারুণ উৎসাহে আউশ ধান আবাদ করলেও প্রাকৃতিক দুর্যোগে আউশের উৎপাদনও ঠিকমতো হয়নি। সব হারিয়ে কৃষকরা রোপা আমনের আবাদের অধিক মনোযোগী হন। আর এর ফলে চলতি বছর সিলেটে বিভাগে রোপা আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, সিলেট বিভাগের চার জেলার রোপা আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩ লাখ ৭১ হাজার ৫৬৪ হেক্টর ভূমি। লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি রোপা আমন আবাদ হয়েছে। আবাদকৃত ভূমি থেকে চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৯ লাখ ৫২ হাজার ৮১২ মেট্রিক টন। যা সহজেই পূরণীয় বলে মনে করছেন কৃষি সংশ্লিষ্টরা। অকাল বন্যায় এ বছর সিলেটের চার জেলার হাওরের বোরো আবাদ সম্পূর্ণরূপে পানিতে ভেসে যায়। সব হারিয়ে কৃষকরা অসহায় হয়ে পড়েন। অসহায় কৃষকরা বোরো আবাদের ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার আশায় ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনায় আউশ ধান উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি আবাদ করেন। কিন্তু অতি বৃষ্টি ও বন্যার কারণে নিম্নাঞ্চলের আউশ উৎপাদনও ব্যাহত হয়। হাওর অ্যাডভোকেসি প্লাটফমের্র তথ্য অনুযায়ী, বন্যায় বোরো আবাদের ক্ষতি হয়েছে ধানে ৩ হাজার ৩২২ কোটি টাকা। এর মধ্যে সিলেটে ৪৫০ কোটি, সুনামগঞ্জে ১ হাজার ৯৬৫ কোটি, হবিগঞ্জে ৬৬১ কোটি, মৌলভীবাজার ২৪৬ কোটি টাকা। শুধুমাত্র ধানের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৩ হাজার ৩২২ কোটি টাকা। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পর সব হারানো কৃষকরা রোপা আমন আবাদে মনোযোগী হন। তাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সিলেট বিভাগে রোপা আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়। নিম্নাঞ্চলে পানি থাকায় কৃষকরা সময়মতো আবাদ না করতে পারলেও পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে রোপা আমন আবাদ করছেন। তারা বলছেন, আশানুরূপ ফলন হওয়ায় বোরো আবাদের ক্ষতি অনেকটা পুষিয়ে উঠা সম্ভব। বোরো আবাদে সুনামগঞ্জ জেলার কৃষকরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হলেও আমন উৎপাদনে সিলেট বিভাগের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি উৎপাদিত হয়েছে সুনামগঞ্জে। হবিগঞ্জ জেলায়ও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি উৎপাদিত হয়েছে। এবারের রোপা আমন আবাদে সিলেট জেলার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৭ শত হেক্টর ভূমি। মৌলভীবাজার জেলার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৯৯ হাজার হেক্টর ভূমি। হবিগঞ্জ জেলার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭৩ হাজার ১ শত ৭০ হেক্টর। সুনামগঞ্জ জেলার লক্ষ্যমাত্রা ৬১ হাজার ৬৯৪ হাজার হেক্টর ভূমি। সিলেটের জকিগঞ্জে আটগ্রামের কৃষক কবির মিয়া বলেন, ‘এ বছর আমন ধান অন্যান্য বছরের চেয়ে বেশি আবাদ করা হয়েছে। ধানের ফলনও ভালো হয়েছে। এখন ধান ঘরে তোলার সময়।’ গোলাপগঞ্জের ফয়ছল মিয়া বলেন, ‘বোরো ধান ক্ষতি হওয়ার পর অনেক কষ্টে আমন ধান চাষ করেছি। এবার ভালো ফলন হয়েছে। বাজারে ধানের দাম আশানুরূপ হলে বোরো ধানের ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে।’ সিলেট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক আলতাবুর রহমান বলেন, ‘সময়মতো বৃষ্টিপাত, বীজ ও সারের সঠিক ব্যবহার, পাকা মাকড়ের আক্রমণ কম হওয়া, ধানের বিভিন্ন রোগ বালাই কম হওয়ায় এবছর রোপা আমনের ভালো ফলন হয়েছে। কৃষকরাও কৃষির প্রতি সচেতন হয়েছে। সিলেট বিভাগে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ফলন হয়েছে। চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রাও ছাড়িয়ে যাবে বলে আমাদের ধারণা।’
সিদ্ধিরগঞ্জে আগুনে পুড়লো ১২টি তুলার গোডাউন ও ৭টি দোকান পূর্ববর্তী

সিদ্ধিরগঞ্জে আগুনে পুড়লো ১২টি তুলার গোডাউন ও ৭টি দোকান

দুই ট্রেনের সংঘর্ষ: খুলনার সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ পরবর্তী

দুই ট্রেনের সংঘর্ষ: খুলনার সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ

কমেন্ট