ভারতের সঙ্গে আলোচনার প্রশ্নই ওঠে না : ইমরান

ভারতের সঙ্গে আলোচনার প্রশ্নই ওঠে না : ইমরান

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান মনে করেন, ভারতের সঙ্গে আলোচনায় বসার প্রশ্নই ওঠে না, কারণ তারা কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নিয়েছে। আর কাশ্মীর সংকটের জেরে যদি দুই পক্ষ যুদ্ধে জড়ায়, তবে সেটা যে কেবল উপমহাদেশের বাইরে ছড়িয়ে পড়তে পারে, তা-ই নয়, ওই যুদ্ধ পরমাণুযুদ্ধে রূপ নিতে পারে বলে আবার সতর্ক করে দিয়েছেন পাকিস্তানের সরকারপ্রধান। পাকিস্তান তেহরিক ই ইনসাফ (পিটিআই) নেতা ইমরান এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইমসে লেখা এক নিবন্ধে ভারতের সঙ্গে পরমাণু যুদ্ধে জড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি অবশ্য এটাও দাবি করেছেন, পাকিস্তান কখনো আগবাড়িয়ে যুদ্ধ বাধাবে না। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরাকে শনিবার দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইমরান ভারত-পাকিস্তান পরমাণুযুদ্ধের আশঙ্কার কথা বলেছেন। কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নেওয়ায় ভারতের সঙ্গে পাকিস্তান কোনো আলোচনা করতে রাজি নয়—এমনটা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এ জন্যই আমরা জাতিসংঘের দ্বারস্থ হয়েছি, প্রতিটি আন্তর্জাতিক ফোরামের দ্বারস্থ হচ্ছি, যেন তারা এখনই পদক্ষেপ নেয়।’ কাশ্মীর সংকটের সমাধান না হলে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ লেগে যেতে পারে মন্তব্য করে ইমরান বলেন, ‘সম্ভাব্য এ ধ্বংসযজ্ঞ ভারতীয় উপমহাদেশের গণ্ডির বাইরে ছড়িয়ে পড়তে পারে।’ তবে পাকিস্তান কখনো যুদ্ধ বাধাবে না, এমন নিশ্চয়তা দিয়ে এ নেতা বলেন, ‘আমি শান্তিবাদী, যুদ্ধবিরোধী মানুষ। যুদ্ধ কোনো সমস্যার সমাধান করতে পারে না বলেই আমার বিশ্বাস।’ কিন্তু যুদ্ধ শুরু হলে কী ঘটতে পারে, সে আশঙ্কা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘পরমাণু শক্তিধর দুটি দেশ যুদ্ধে জড়ালে যদি তারা প্রথাগত যুদ্ধে লিপ্ত হয়, তবে সেটা পরমাণুযুদ্ধে রূপ নেওয়ার সম্ভাবনা থাকে।’ শুরুটা পাকিস্তানের দিক থেকে হবে না—এমন মন্তব্য করলেও ইমরানের বিশ্বাস, যুদ্ধ লাগলে পাকিস্তানিরা প্রাণপণ লড়াই করবে। ইমরানের এসব মন্তব্যের পরদিন গতকাল রবিবার ভারত অভিযোগ করেছে, কোনো রকম উসকানি ছাড়াই পাকিস্তান এ বছর দুই হাজার ৫০ বার নিয়ন্ত্রণরেখায় (এলওসি) যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করেছে এবং এর জেরে ২১ জন ভারতীয় মারা গেছে। ভারত সরকার গতকাল এক বিবৃতিতে এমন অভিযোগ উত্থাপনের পাশাপাশি পাকিস্তানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, তারা যেন ২০০৩ সালের যুদ্ধবিরতি চুক্তি মেনে চলে এবং নিয়ন্ত্রণরেখায় শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখে। ভারত গত ৫ আগস্ট সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিলের মাধ্যমে কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নিয়ে সেখানে কেন্দ্রের শাসন জারি করে। এ পদক্ষেপের বিরুদ্ধে কাশ্মীরিদের বিক্ষোভ ঠেকাতে সেখানে কারফিউ জারি করা হয়, সব ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয় এবং সর্বস্তরের কাশ্মীরিদের মধ্যে ব্যাপক ধরপাকড় চালানো হয়। এর পরও কাশ্মীরে ছোট-বড় বিক্ষোভ অব্যাহত আছে। কাশ্মীরে বিক্ষোভ ও হতাহতের ব্যাপারে ভারত সরকারের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, গত ছয় সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে ২০টি বিক্ষোভ হয়েছে ওই উপত্যকায়। আরো বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরে ওই সূত্র জানায়, গত ৫ আগস্টের পর থেকে কাশ্মীরে ৭২২টি বিক্ষোভ হয়েছে। এর মধ্যে শ্রীনগরের বিক্ষোভের পাশাপাশি অন্যান্য বড় বিক্ষোভের মধ্যে রয়েছে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় বারামুল্লা ও দক্ষিণের পুলওয়ামা এলাকার বিক্ষোভ। বিভিন্ন বিক্ষোভে হতাহতের ব্যাপারে ওই সূত্র জানায়, এ পর্যন্ত প্রায় ২০০ জন সাধারণ নাগরিক ও ৪১৫ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। এর মধ্যে গত দুই সপ্তাহে আহতের সংখ্যা ৯৫। ধরপাকড় সম্পর্কে ওই সূত্র জানায়, আটকের সংখ্যা চার হাজার ১০০ জনের বেশি। আটক ব্যক্তিদের মধ্যে ১৭০ জন স্থানীয় রাজনীতিকও রয়েছেন। গত দুই সপ্তাহে তিন হাজার জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলেও জানান ওই কর্মকর্তা। তবে কারামুক্তদের মধ্যে কোনো রাজনীতিক আছেন কি না, তা তিনি নিশ্চিত করতে পারেননি। ভারত সরকার অবশ্য কাশ্মীরে মানবিক পরিস্থিতির আসল চিত্র পাশ কাটিয়ে দাবি করে যাচ্ছে, কাশ্মীরে কেন্দ্রের শাসন জারির পর এ পর্যন্ত মাত্র পাঁচজন সাধারণ নাগরিক নিহত হয়েছে। নিহত পাঁচজনের মধ্যে চারজনের পরিবার এসব মৃত্যুর জন্য নিরাপত্তা বাহিনীকে দায়ী করেছে। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্তি পেলেও ভারত ও পাকিস্তান তখন থেকেই কাশ্মীর ইস্যুতে দ্বন্দ্বে লিপ্ত রয়েছে। এ নিয়ে প্রতিবেশী দেশ দুটি দুই দফা যুদ্ধে জড়িয়েছে। ভারতশাসিত কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা রহিত হওয়া নিয়ে আবার পরিস্থিতি চরম উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।
চীনে আটক করে মুসলমান নারীদের বন্ধ্যা করে দেয়া হচ্ছে পূর্ববর্তী

চীনে আটক করে মুসলমান নারীদের বন্ধ্যা করে দেয়া হচ্ছে

'এক রাষ্ট্র, এক ভাষা চাই,' অমিত শাহের বক্তব্যে তোলপাড় পরবর্তী

'এক রাষ্ট্র, এক ভাষা চাই,' অমিত শাহের বক্তব্যে তোলপাড়

কমেন্ট