মূলধনভিত্তি বাড়াচ্ছে ইউসিবি

মূলধনভিত্তি বাড়াচ্ছে ইউসিবি

টেকসই মুনাফা ও প্রবৃদ্ধির জন্য মূলধনভিত্তি বাড়ানোয় জোর দিচ্ছে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি) লিমিটেড। এজন্য কর-পরবর্তী মুনাফায় প্রবৃদ্ধি থাকলেও সর্বশেষ হিসাব বছরে লভ্যাংশের হার কমানো হয়েছে। মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনার আওতায় অনাদায়ী ঋণ, ঋণ-আমানত অনুপাত কমিয়ে আনতেও কাজ করছে ব্যাংকের ম্যানেজমেন্ট। গতকাল বার্ষিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এসব তথ্য দেন ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এ ই আব্দুল মুহাইমেন। রাজধানীর গুলশানে ব্যাংকের করপোরেট অফিসে প্রথমবারের মতো আয়োজিত আর্নিংস ডিসক্লোজার অনুষ্ঠানে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী, বিশ্লেষক ও সংবাদকর্মীদের সামনে ২০১৭ সালের নিরীক্ষিত ফলাফলের বিভিন্ন দিক পর্যালোচনার পাশাপাশি বর্তমান ব্যবসায়িক বাস্তবতায় আগামী দিনগুলোয় ব্যাংকের কর্মপরিকল্পনাও তুলে ধরেন ইউসিবি এমডি। এ সময় অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শওকত জামিল, আহসান আফজাল, আরিফ কাদরি, মোহাম্মদ মামদুদুর রশিদ ও উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সোহরাব মুস্তাফাসহ ব্যাংকের অনেক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে এ ই আব্দুল মুহাইমেন বলেন, গত বছর থেকেই ইউসিবি তাদের মূলধনভিত্তি বৃদ্ধি, প্রভিশন সংরক্ষণ ও ব্যয় নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। মূলধন বাড়ানোর প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে গেল বছরের জন্য লভ্যাংশের হার ১৫ শতাংশের পরিবর্তে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। এটি বিনিয়োগকারীদের সাময়িকভাবে হতাশ করলেও রিজার্ভ ও ব্যাংকের দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক ভিত্তি শক্তিশালী করতে ভূমিকা রাখবে। ইউসিবির গেল বছরের আর্থিক ফলাফল প্রকাশ করে তিনি আরো বলেন, ব্যয় নিয়ন্ত্রণ ও ফি বাবদ আয় বৃদ্ধির সুবাদে ব্যাংকের সুদ আয়ে যে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে, পরিচালন মুনাফা তার চেয়ে বেশি বেড়েছে। গেল বছর সুদ আয় ১ দশমিক ৬৫ শতাংশ বাড়লেও পরিচালন আয় বেড়েছে ৮ দশমিক ৬৯ শতাংশ। ২০১৭ সালে ব্যাংকের সুদ আয় হয়েছে ২ হাজার ৫৪৮ কোটি টাকা; আগের বছর যা ছিল ২ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা। অন্যদিকে গেল বছর ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা হয়েছে ৮৩২ কোটি টাকা; এর আগের বছর যা ছিল ৭৬৬ কোটি টাকা। ২০১৭ সালে কর-পরবর্তী মুনাফা দাঁড়িয়েছে ২৭২ কোটি টাকা; আগের বছর যা ছিল ২৬৩ কোটি টাকা। আগের বছরের তুলনায় আয়কর বেশি পরিশোধ করার কারণে নিট মুনাফায় প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। ব্যাংকের ঋণের স্থিতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০১৬ সালের তুলনায় ১৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে গেল বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ইউসিবির ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ২৬ হাজার ২৫৮ কোটি টাকা। করপোরেট ঋণে আগের বছরের তুলনায় গেল বছরে ২৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি পেয়েছে ইউসিবি। ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকের মোট ঋণের ৬৫ শতাংশই করপোরেট। বাকি ২৯ শতাংশ এসএমই ও ৬ শতাংশ রিটেইল। অন্যদিকে গেল বছর শেষে ব্যাংকের আমানত স্থিতি দাঁড়িয়েছে ২৭ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। এটি এর আগের বছরের তুলনায় ৮ দশমিক ২ শতাংশ বেশি। তবে এ সময়ে রিটেইল আমানতে প্রবৃদ্ধি ৫৪ শতাংশ ছাড়িয়েছে। ২০১৭ সাল শেষে ইউসিবির ঋণ-আমানতের অনুপাত দাঁড়িয়েছে ৮০ দশমিক ৩ শতাংশ; আগের বছর একই সময়ে যা ছিল ৭৬ শতাংশ। গেল বছর ব্যাংকটির অনাদায়ী ঋণের হার (এনপিএল) দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ; এর আগের বছর যা ছিল ৮ শতাংশ। গেল বছর ব্যাংকের সঞ্চিতি সংরক্ষণের হার দাঁড়িয়েছে ৩৮ দশমিক ৫ শতাংশ; এর আগের বছর যা ছিল ৩২ দশমিক ৯ শতাংশ। ঋণের বিপরীতে পর্যাপ্ত জামানত গ্রহণ করায় অন্য ব্যাংকের তুলনায় ইউসিবির প্রভিশন সংরক্ষণের হার কম বলে উল্লেখ করেন তিনি। এদিকে নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে গেল বছরের জন্য বিনিয়োগকারীদের ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয়ার সুপারিশ করেছে ইউসিবির পরিচালনা পর্ষদ। নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন, লভ্যাংশ ও অন্যান্য এজেন্ডা অনুমোদনের জন্য ৩০ এপ্রিল বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) আয়োজন করবে কোম্পানিটি। এজিএমের সময় ও স্থান পরে জানিয়ে দেয়া হবে। এজন্য রেকর্ড ডেট নির্ধারণ করা হয়েছে ১১ এপ্রিল। বছর শেষে ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি সমন্বিত আয় (ইপিএস) হয়েছে ২ টাকা ৫৮ পয়সা। ৩১ ডিসেম্বর শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ২৫ টাকা ৪৯ পয়সায়। ১৯৮৬ সালে শেয়ারবাজারে আসা ইউসিবির অনুমোদিত মূলধন ১ হাজার ৫০০ কোটি ও পরিশোধিত মূলধন ১ হাজার ৫৪ কোটি ১৩ লাখ টাকা। রিজার্ভ ১ হাজার ৩৮৩ কোটি ৩২ লাখ টাকা। কোম্পানির মোট শেয়ারের ৩৭ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ এর উদ্যোক্তা-পরিচালকের কাছে, বাংলাদেশ সরকারের হাতে শূন্য দশমিক ৮১, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ১৯ দশমিক শূন্য ৭, বিদেশী ১ দশমিক ৯৩ এবং বাকি ৪১ দশমিক ১৭ শতাংশ শেয়ার রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে। ডিএসইতে সর্বশেষ ১৮ টাকা ২০ পয়সায় ইউসিবির শেয়ার হাতবদল হয়। গত এক বছরে এর সর্বনিম্ন দর ছিল ১৬ টাকা ৭০ পয়সা ও সর্বোচ্চ ২৬ টাকা ৩০ পয়সা। সর্বশেষ নিরীক্ষিত মুনাফা ও বাজারদরের ভিত্তিতে এ শেয়ারের মূল্য-আয় (পিই) অনুপাত ৭ দশমিক ৩১, যা হালনাগাদ অনিরীক্ষিত মুনাফার ভিত্তিতে ৭ দশমিক শূন্য ৫।
প্রণয়ন হচ্ছে নতুন বাণিজ্য সংগঠন আইন পূর্ববর্তী

প্রণয়ন হচ্ছে নতুন বাণিজ্য সংগঠন আইন

'শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই বাংলাদেশ উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিনত হবে' পরবর্তী

'শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই বাংলাদেশ উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিনত হবে'

কমেন্ট