রোনালদোকে নিয়ে প্রত্যাবর্তনের স্বপ্ন ইতালির!

রোনালদোকে নিয়ে প্রত্যাবর্তনের স্বপ্ন ইতালির!

বিদায় রিয়াল। বার্নাব্যুর সংসার ছেড়ে বাণপ্রস্থে যাওয়ার আগে ইতালিতে পা রেখেছেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো ডস স্যান্টোস অ্যাভেইরো। বিশ্ব ফুটবল যাকে একনামে চেনে 'সিআর সেভেন' বলে। বয়সের থাবা অগ্রাহ্য করে তুখোড় ফিটনেসে বিশ্ব ফুটবলের শাসক এখনও তিনি। প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডাররা তার শাসনেই অত্যাচারিত! তবু জুভেন্টাসে কি সেরা ছন্দে পাওয়া যাবে ক্রিশ্চিয়ানোকে? মিলান থেকে ফোনে প্রশ্ন শুনেই ঝাঁঝিয়ে ওঠেন বিশ্ব ফুটবলের অন্য ক্রিশ্চিয়ান। ক্রিশ্চিয়ান জাকার্দো। তিনি বলে দেন, ইংল্যান্ডে প্রিমিয়ার লিগ, স্পেনের লা লিগায় নিজের শ্রেষ্ঠত্ব যে প্রমাণ করে এসেছে, তার কাছে বিশ্বের অন্য যে কোনও লিগে সফল হওয়া কোনও ব্যাপারই নয়। লিখে রাখুন মধ্য তিরিশেও ইতালিতে কাঁপিয়ে যাবে ও। সামনের কয়েক বছর পর্তুগীজ মহাতারকার যে দেশে বাসা বাঁধতে চলেছেন, সেই ইতালির হয়েই ২০০৬ বিশ্বকাপ জিতেছিলেন জাকার্দো। ইতালির সোনালি প্রজন্মের অংশ তিনি। তিনিই এবার নিজের সম্মানির হয়ে ব্যাট ধরে বলে দিলেন, রোনালদো এক বিরল প্রতিভা। বিশ্ব ফুটবলে আগামী দিনেও ওর মতো তারকা মেলা দুষ্কর হবে। বলা হয় ফুটবল টিম গেম। তবে রোনালদোর মতো ফুটবলাররা একাই যে কোনও ম্যাচে পার্থক্য গড়ে দেয়। রোনালদো আসায় বরং ইতালির ফুটবলে জোয়ার আসবে। রোনালদোকে কেন্দ্র করেই সিরি আ-তে ফের অতীত গৌরবে ফিরে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছে। ভরা যৌবনের স্বপ্নে উদ্বেল জাকার্দোও। ৬০ বছর পরে বিশ্বকাপে যোগ্যতা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে ইতালি। চারবারের চ্যাম্পিয়নের গায়ে লেগেছে কলঙ্কের ছিটে। সেই স্বপ্নভঙ্গের যন্ত্রণা রক্তাক্ত করে জাকার্দোকে। ‘‘এমন লজ্জার মুখোমুখি আগে কখনও হইনি। গোটা দেশই কার্যত শোকবাসরে পরিণত হয়েছিল, সুইডেনের বিরুদ্ধে প্লে অফে জিততে না পারায়। তবে মিলিয়ে নেবেন ইতালি ঘুরে দাঁড়াবে। ফের প্রমাণ করবে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব। এটাই শেষবার। দেশের সোনালি যুগ ফিরে আসার ভরসায় ক্রিশ্চিয়ান জাকার্দোর ভরসা পর্তুগীজ ক্রিশ্চিয়ানো! ইতালির জাতীয় দল তো বটেই অনূর্ধ্ব পর্যায়েও চুটিয়ে খেলেছেন তিনি। সেন্ট্রাল ডিফেন্স অথবা ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডে খেলা জাকার্দোর প্রধান অস্ত্র প্রখর পজিশনাল সেন্স এবং স্ট্যামিনা। নিজের সেরা সময়ে আটকে দিতেন বাঘা বাঘা স্ট্রাইকারদেরও। পার্মায় যে কোচের অধীনে তিনি খেলতেন সেই ফ্রান্সেসকো গুইদোলিন প্রিয় ছাত্রের জন্য দুটো শব্দ ব্যবহার করতেন, 'সেন্ট্রোমেডিয়ানো মেডোদিস্তা'। ইতালিয়ান ভাষা থেকে বাংলায় অনুবাদ করলে যার অর্থ দাঁড়ায় 'মাঝমাঠের যাজক'। ডিপ লাইং মিডফিল্ডার হিসেবে যেভাবে গোটা ম্যাচে মাথা ঠাণ্ডা বল অপারেট করতেন, তাতেই এমন শিরোনাম। শুধু কিংবদন্তি ইতালিয়ান কোচ ফ্রান্সেসকো গুইদোলিন-ই নয়, জাতীয় দলে মার্সেলো লিপ্পি, মিলানে ক্লারেন্স সিডর্ফ, মাসমিলানো আলেগ্রি-র তুরুপের তাস ছিলেন তিনি। বিপক্ষের মাঝমাঠ অকেজো করতে সেরা কোচেদের টানা ভরসা দিয়ে গিয়েছেন তিনি। কিংবদন্তি কোচেদের সম্পর্কে আজও শ্রদ্ধা ঝড়ে পড়ে ৩৭ বছরের ক্রিশ্চিয়ান জাকার্দোর গলায়। 'লিপ্পি সব সময়ে ফুটবলারদের উৎফুল্ল রাখার চেষ্টা করতেন। মাঠে বল পজেশনে জোর দিতেন।' অন্যদিকে, সিডর্ফ ছিলেন অন্য রকম। মাঠে নয়, অনুশীলনে সবসময়ে জোর দিতেন তিনি। খুটিয়ে প্রতিপ্রক্ষের দুর্বলতা ম্যাচের আগে স্ট্র্যাটেজিতেই ঠিক করে ফেলতেন তিনি। বলছিলেন তিনি। লিপ্পির কোচিংয়েই জাতীয় দলে অভিষেক জাকার্দোর। ফিনল্যান্ডের বিরুদ্ধে। স্লোভেনিয়ার বিরুদ্ধে প্রথম গোল। জাকার্দোর অভিষেক গোলেই বিশ্বকাপে খেলার ছাড়পত্র মেলে। আর বিশ্বকাপে তো পুরো ইতিহাস। তবে 'সব পাওয়ার' বিশ্বকাপেই মিশে আছে প্রথম যন্ত্রণা। গোটা টুর্নামেন্টে ইতালির রক্ষণ মোট দুটো গোল হজম করেছিল। তার মধ্যে একটি আবার জাকার্দোরই আত্মঘাতী গোলে। সেই প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে আজও ঠোঁট কাঁপে চ্যাম্পিয়ন ইতালিয়ানের, গোটা টুর্নামেন্টে যে কয়েকটা ম্যাচে সুযোগ পেয়েছিলাম, প্রত্যেকটিতেই নিজের সেরাটা উজাড় করে দিয়েছিলাম। তবে টুর্নামেন্টে মাত্র একটাই ভুল করেছিলাম। এখনও লোকে আমার ভুল নিয়ে আলোচনা করে। যন্ত্রণাকাতর গলায় আরও যোগ করেন, তবে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরে অতীত ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। যারা এখনও আমাকে সেই প্রসঙ্গে কথা বলতে আসে, স্রেফ হেসে উড়িয়ে দিই। জাকার্দোর আত্মঘাতী গোলের মতোই বিশ্ব ফুটবলে অমর হয়ে রয়েছে জিদান-মাতেরাজ্জির ঢুঁসো! ফ্রান্স বনাম ইতালি ফাইনালে অবশ্য প্রথম একাদশে ছিলেন না তিনি। ডাগ আউটে বসেই মারণ-হাতাহাতি লক্ষ্য করেছিলেন। সেই কথা বলতে গিয়ে আজও গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে ক্রিশ্চিয়ান জাকার্দোর, ডাগ আউটে বসে বুঝতে পারিনি মাঠে হঠাৎ কী হল। তবে মাতেরাজ্জি মাঠে পড়ে কাতরাতে দেখেই বুঝে যাই মারাত্মক কিছু একটা হয়েছে। এর মধ্যেই টিভিতে দেখা যায় সেই ঢুঁসো। নিজের ব্যক্তিগত মহাভুল নয়। জাকার্দো এখনও ডুবে বারো বছর আগের সোনার স্মৃতিতে। 'কী দল ছিল আমাদের! বুঁফো, কানাভারো, ডে রোসি, দেল পিয়েরো, তোত্তি, নেস্তা, পির্লো, মাতেরাজ্জি! এক-একজন নিজেই কিংবদন্তি। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরে উদ্বেল হয়েছিলাম। তবে, এখন যতই সময় এগিয়ে যায়, অতীতের সেই মুহূর্তগুলো আরও মহার্ঘ্য মনে হয়। দেখুন, রোনালদো কিংবা মেসির দলকে ইতালির মতো শক্তপোক্ত রক্ষণের মোকাবিলা করতে হয়নি। তবু ওরা পারল না। নেইমারও তো ছিটকে গেছে। আমার তো তবু একটা বিশ্বকাপ রয়েছে। শ্রেষ্ঠত্বের ব্র্যাকেটে বসার উদগ্র বাসনা মিশে যায় হাজার হাজার কিলোমিটার দূরত্ব, সময়! এর সঙ্গেই জুড়ে দেন, বুঁফো, পির্লোদের বিকল্প পাওয়া ভীষণ মুশকিল। আশা রাখাই যায়। তবে নতুন পির্লোদের পাওয়া সম্ভব নয়। সিরি-আ'র রমরমার যুগেই জাকার্দো অনেক ম্যাচে আকর্ষণ ছিলেন। বোলোনা, স্পেজিয়া, পালেরমো, পার্মা, কাপ্রির মতো প্রথম সারির সিরি-আ দলেই নিজের সেরা সময় কাটিয়েছেন। টানা দু'বছর এসি মিলানে রোবিনহো, কাকাদের সতীর্থ হিসেবে পেয়েছেন। তারকা ব্রাজিলিয়ানদের সঙ্গে এক সময় ইতালির ফুটবল কাঁপানো অবশ্য নেইমারের পারফরম্যান্সে মোটেই খুশি নন। সাফ বলে দেন, রোনালদো কিংবা মেসিরা অন্য লেভেলের ফুটবলার। নেইমার ভালো, তবে ওদের মতো অবশ্যই নয়। তবে বয়স ওর সঙ্গে, ওকে অনেক উন্নতি করতে হবে। জাতীয় দলের সতীর্থদের অনেকেই অবসরের গ্রহে চলে গেলেও, জাকার্দো প্রিয় খেলা ছাড়তে পারেননি। মাল্টার প্রথম ডিভিশনের হামরুন স্পার্টান্স-এ খেলেন তিনি। ক্যারিয়ারের সায়াহ্নে পৌঁছে যাওয়া জাকার্দো এখনও নিয়ম করে স্বপ্ন দেখেন, আন্তর্জাতিক ফুটবলে জাতীয় দলের স্বমহিমায় প্রত্যাবর্তনের।
ওয়ানডে সিরিজ খেলতে পারছেন না মাশরাফি! পূর্ববর্তী

ওয়ানডে সিরিজ খেলতে পারছেন না মাশরাফি!

রিয়ালকে নিয়ে রোনালদোর আবেগঘন চিঠি পরবর্তী

রিয়ালকে নিয়ে রোনালদোর আবেগঘন চিঠি

কমেন্ট