সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ ইউনাইটেড গ্রুপের

সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ ইউনাইটেড গ্রুপের

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষে (বিআইডিএ) গত বছর স্থানীয় বা দেশীয় বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৮৫০ কোটি টাকার। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ প্রস্তাবটি ইউনাইটেড গ্রুপের। আর খাত হিসেবে এ সময়ে বিনিয়োগকারীদের সবচেয়ে বেশি আকৃষ্ট করেছে জ্বালানি খাত। স্থানীয় ও বিদেশী বিনিয়োগের অন্যতম পোষক কর্তৃপক্ষ বিআইডিএ। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন সংস্থাটিতে ২০১৭ সালে মোট ১ হাজার ৬৬৬টি প্রকল্প প্রস্তাব গেছে। এর মধ্যে শীর্ষ ১০ প্রকল্পে প্রস্তাবিত বিনিয়োগ ৭ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। প্রকল্পগুলোর মধ্যে বিনিয়োগের পরিমাণে সবচেয়ে বড় ইউনাইটেড গ্রুপের ইউনাইটেড আনোয়ারা পাওয়ার লিমিটেড। প্রকল্পটিতে প্রস্তাবিত বিনিয়োগ ১ হাজার ৯২০ কোটি টাকা। চট্টগ্রামের আনোয়ারায় গত বছরের এপ্রিলে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয় ৩০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্রটির। ২০১৯ সালে প্রকল্পটির উৎপাদনে আসার কথা রয়েছে। বিআইডিএতে গত বছর নিবন্ধিত দ্বিতীয় বৃহৎ বিনিয়োগ প্রস্তাবটিও ইউনাইটেড গ্রুপের। চট্টগ্রামের আনোয়ারাতেই লিকুইফায়েড পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) বোতলজাত প্লান্টটিতে প্রতিষ্ঠানটির প্রস্তাবিত বিনিয়োগের পরিমাণ ৯৪৭ কোটি টাকা। তবে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া আপাতত স্থগিত আছে বলে জানিয়েছে ইউনাইটেড কর্তৃপক্ষ। বিনিয়োগ প্রস্তাবনাগুলো সম্পর্কে ইউনাইটেড গ্রুপের চেয়ারম্যান হাসান মাহমুদ রাজা বণিক বার্তাকে বলেন, চট্টগ্রামের আনোয়ারাতেই আমাদের দুটি বিনিয়োগ প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনা ছিল। এর মধ্যে এলপিজি বোটলিং প্লান্টটির বাস্তবায়ন আপাতত স্থগিত আছে। কারণ প্রকল্পটির পার্শ্ববর্তী স্থানে সরকারি উদ্যোগে এলএনজি প্রকল্প স্থাপনের কথা রয়েছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে সেখানে এলপিজি বোটলিং প্লান্ট স্থাপনের আর কোনো সুযোগ থাকবে না। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বাস্তবায়নের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। আশা করছি, ২০১৯ সালের প্রথম ভাগেই উৎপাদনে আসবে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি। ২০১৭ সালে খাতভিত্তিক বিনিয়োগ প্রস্তাব পর্যালোচনায় দেখা যায়, বিনিয়োগের পরিমাণে শীর্ষ ১০ প্রকল্পের পাঁচটিই জ্বালানি খাতের। এর মধ্যে আবার দুটিই এলপিজি বোতলজাতকরণ প্রকল্প। জ্বালানি খাতের বাকি তিন প্রকল্পের মধ্যে দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্র ও একটি অপরিশোধিত পেট্রোলিয়াম এবং প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলন সংক্রান্ত। বিনিয়োগের পরিমাণ বিবেচনায় তৃতীয় বৃহৎ প্রকল্পটিও জ্বালানি খাতের। ১১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎ প্রকল্পটির নাম আনলিমা এনার্জি লিমিটেড। চট্টগ্রামের শিকলবাহায় প্রকল্পটিতে বিনিয়োগ প্রস্তাবনা ৮৯১ কোটি টাকা। ২০১৯ সালের শুরুতেই কেন্দ্রটি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরুর কথা জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। আনলিমা গ্রুপের চেয়ারম্যান মাহমুদুল হক এ প্রসঙ্গে বলেন, আমাদের বিদ্যুৎ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ দ্রুতই এগিয়ে যাচ্ছে। নির্মাণাধীন এ প্রকল্পটির ৩০ শতাংশ কাজ এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। আশা করছি, ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসেই বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজ শুরু হবে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটির সক্ষমতা সম্প্রসারণের পরিকল্পনাও আছে আমাদের। গত বছর নিবন্ধিত ষষ্ঠ বৃহৎ বিনিয়োগ প্রকল্পটি জ্বালানি খাত এলপিজি বোতলজাতকরণের। নাভানা গ্রুপের নাভানা এলপিজি লিমিটেড নামে প্রকল্পটিতে বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ৬৩৬ কোটি টাকা। যোগাযোগ করা হলে নাভানা এলপিজি লিমিটেডের চিফ অপারেটিং অফিসার সুমিত সাহা বলেন, বাগেরহাটের মোংলায় আলোচ্য প্রকল্পটি নাভানা সিএনজি নামে আরো আগেই শুরু হয়। গত বছর নাভানা এলপিজি লিমিটেড নামে নিবন্ধন নেয়া হয়েছে। প্রকল্পটিতে এরই মধ্যে আমরা উৎপাদনও শুরু করেছি। নাভানা এলপিজির পর সপ্তম বৃহৎ বিনিয়োগ প্রস্তাব টিএমএসএস এলপিজি লিমিটেডের। ৬২৮ কোটি টাকা বিনিয়োগ প্রস্তাব করা হয়েছে অপরিশোধিত পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলনের এ প্রকল্পে। ২০১৭ সালের প্রস্তাবিত চতুর্থ বৃহৎ স্থানীয় বিনিয়োগ প্রকল্পটি পর্যটন খাতের। প্রস্তাবনাটি দিয়েছে গ্রীন ডেল্টা হাউজিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড (ইউনিট-২)। প্রকল্পটিতে বিনিয়োগ প্রস্তাবনা ৭৬২ কোটি টাকার। প্রস্তাবনা অনুযায়ী গ্রীন ডেল্টা হাউজিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের ইউনিট-২তে নির্মিত হবে হোটেল ও মোটেল। পঞ্চম বৃহৎ বিনিয়োগ প্রকল্পটি অদ্রি বিজনেস সার্ভিসেস লিমিটেডের। পোলট্রি-হ্যাচারি খাতে অদ্রি বিজনেস সার্ভিস লিমিটেডের প্রস্তাবিত বিনিয়োগ ৭৩৩ কোটি টাকা। গত বছর নিবন্ধিত অষ্টম বৃহৎ প্রকল্পটি সীমা এডিবল অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজের। প্রকল্পটিতে প্রস্তাবিত বিনিয়োগ ৫৫০ কোটি টাকা। নবম বৃহৎ বিনিয়োগ প্রস্তাবনাটি ছিল অরচার্ড গ্রুপের। তৈরি পোশাক খাতের গ্রুপটির নিবন্ধিত প্রকল্পের নাম রয়েল ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক লিমিটেড। এ পার্কে সিরামিকস ও টাইলস উৎপাদন করতে চায় তারা। এ প্রকল্পে তাদের বিনিয়োগ প্রস্তাবনা ৪২৯ কোটি টাকা। রয়্যাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক প্রকল্পের মূল প্রতিষ্ঠান অরচার্ড গ্রুপের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ ফারুক বণিক বার্তাকে বলেন, আমাদের প্রকল্পটি প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। মূলত আমরা ব্যাংকঋণের অপেক্ষায় আছি। ব্যাংক খাতে এই মুহূর্তে কিছুটা সংকট যাচ্ছে, তাই হয়তো আরো কিছুটা দেরি হবে। প্রস্তাবনা অনুযায়ী প্রকল্পটি উৎপাদনে আসতে আরো দেড় বছর সময় লাগবে। ময়মনসিংহের ভালুকায় প্রকল্পটিতে গ্যাস সংযোগসহ প্রাথমিক অবকাঠামোর কাজ এগিয়ে রেখেছি। এখন ব্যাংক অর্থায়ন নিশ্চিত হলেই পুরোদমে কাজ শুরু করব। আমরা স্বল্প সুদে ব্যাংক অর্থায়ন পাওয়ার চেষ্টা করছি। সিঙ্গেল ডিজিট সুদে দেশীয় ঋণের পাশাপাশি বিদেশী ব্যাংকের অর্থায়নেরও চেষ্টা চলছে। দশম বৃহৎ বিনিয়োগ প্রকল্পটি আসবাব খাতের। আখতার ফার্নিশার্স লিমিটেড প্রকল্পটিতে বিনিয়োগ করতে চায় ৪০২ কোটি টাকা। বিনিয়োগ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অগ্রগতি জানতে চাইলে আখতার ফার্নিশার্স লিমিটেডের চেয়ারম্যান কে এম আখতারুজ্জামান বলেন, মানিকগঞ্জে আমাদের প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ প্রায় শেষ। এখন পর্যন্ত ৮৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আশা করছি, চলতি বছর জুন নাগাদ পুরোদমে এ প্রকল্পে উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করতে পারব। বিআইডিএ সংশ্লিষ্টরা জানান, নিবন্ধনের পরিমাণ যা-ই হোক না কেন, প্রস্তাবের মাত্র ৪০ শতাংশ শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়। গত বছর যেগুলো নিবন্ধন নিয়েছে, সেগুলোরও চাহিদা অনুযায়ী বাস্তবায়ন সময় বাড়তে পারে। বিনিয়োগ প্রস্তাবনা বাস্তবায়নে ক্ষেত্রবিশেষে পাঁচ বছরও লেগে যায়। বিআইডিএর নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী এম আমিনুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, দেশে সুষম শিল্পায়নের জন্য অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হচ্ছে। তারপরও বাস্তবতা হলো আমাদের প্রধান বন্দর চট্টগ্রামে। বহির্বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগও বন্দরের মাধ্যমে। আর দেশের শিল্পগুলোর গুরুত্বপূর্ণ অংশ চট্টগ্রামকেন্দ্রিক। স্বাভাবিকভাবেই উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগের আগ্রহ চট্টগ্রামকে ঘিরে। বাংলাদেশে অর্থনীতির বিকাশের পথে প্রধান অন্তরায় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি। আবাসিক ও শিল্প সব ক্ষেত্রেই বিদ্যুৎ ও জ্বালানির ক্রমবর্ধমান চাহিদার কারণে এ দুই খাতে বিনিয়োগের আগ্রহও বেশি। বিনিয়োগ বাস্তবায়ন আমরা নজরদারি করি। জমি নেয়া থেকে শুরু করে নানা কারণে বিনিয়োগ প্রকল্প বাস্তবায়নে সময় লাগে। যতগুলো প্রকল্প নিবন্ধন নিয়েছে, কখনই তার শতভাগ বাস্তবায়ন হয় না।
পেঁয়াজের মূল্যহ্রাস পূর্ববর্তী

পেঁয়াজের মূল্যহ্রাস

নিশ্চিতভাবেই আরেকটা অর্থনৈতিক মন্দা আসছে:  বিল গেটস পরবর্তী

নিশ্চিতভাবেই আরেকটা অর্থনৈতিক মন্দা আসছে: বিল গেটস

কমেন্ট