সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে পেঁয়াজের বাজার

সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে পেঁয়াজের বাজার

সরবরাহ কম থাকায় প্রতিবছরই অক্টোবর-নভেম্বর মাসে বাজারে সংকট থাকে দেশি পেঁয়াজের। এসময় আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজের নিয়ন্ত্রণে থাকে বাজার। তবে চলতি বছরে দেশি পেঁয়াজের উৎপাদন ও বিদেশি পেঁয়াজ আমদানি পর্যাপ্ত থাকলেও সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে পেঁয়াজের দাম চলে গেছে নিয়ন্ত্রণের বাইরে। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে স্থানীয় বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়াতে আমদানি করা পেঁয়াজের উচ্চমূল্যের সুযোগ নেন ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীরা আগে থেকে ভারতের মিনিমাম এক্সপোর্ট প্রাইজ (এমইপি) বৃদ্ধির অভাস পায়। মূল্যবৃদ্ধির বাজারে তারা জমা করা পেঁয়াজ অস্বাভাবিক দামে বিক্রির সুযোগ নেয়। আর এমন পরিস্থিতি সৃষ্টির আগে তাদের অস্বাভাবিক মজুদের মাধ্যমেই দেশে কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হয়। যার কারণে ৪০ টাকার পেঁয়াজ খুচরা ক্রেতাদের ১০০ টাকায় কিনতে হয়। ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩, ২০১৫ ও ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসেই ক্রেতাদের প্রতি কেজি পেঁয়াজ কিনতে গুণতে হয়েছে ১০০ টাকা বা তার বেশি। কিন্তু ২০১৪ ও ২০১৬ সালে পেঁয়াজের দাম ছিল ৪০ টাকার নিচে। তথ্য সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালে প্রতিকেজি পেঁয়াজের গড় দর ছিল ৫৬.৮৪ টাকা। কিন্তু নভেম্বর মাসে প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১২০ থেকে ১২৫ টাকায়। ২০১৪ সালে প্রতিকেজি পেঁয়াজের গড় দর ছিল ৩৪.০২ টাকা, কিন্তু নভেম্বরে পেঁয়াজের দাম ছিল ৩৫ থেকে ৪০ টাকায়। ২০১৪ সালে পেঁয়াজের দাম ছিল স্থিতিশীল অবস্থানে। এদিকে, ২০১৫ সালে আবারো লাগামহীন হয়ে পড়ে পেঁয়াজের বাজার দর। ওই বছর প্রতিকেজি পেঁয়াজের গড় দর ৬০.২৫ টাকা থাকলেও নভেম্বরে তা ১০০ টাকা থেকে ১০৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তবে ২০১৬ সালে স্বাভাবিক আচারণ দেখিয়েছে পেঁয়াজ। ওই বছর প্রতিকেজি পেঁয়াজের গড় দাম ৩১.৮৭ টাকা থাকলেও নভেম্বরে তা ৩০ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এদিকে, চলতি বছরে পেঁয়াজের ঝাঁজ বাড়ে লাফিয়ে লাফিয়ে। চলতি বছরের (জানুয়ারি-অক্টোবর) পেঁয়াজের গড় দাম ৬১.১৭ টাকা হলেও নভেম্বরে প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯৫ থেকে ১০০ টাকায়। সূত্র জানায়, দেশের পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট। চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ কেন্দ্রীক এ সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে পেঁয়াজের বাজার। পেঁয়াজ সরবরাহের চেইনে চার স্তরের মজুদদার ও সাতটি মধ্যস্থতাকারী রয়েছে। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) করা এক জরিপে বলা হয়েছিল, পেঁয়াজের বিক্রিত খুচরা মূল্যের ৩৬ শতাংশ উৎপাদন ব্যয় হয়, লাভের গড়ে ২০ শতাংশ পান উৎপাদনকারী, বেপারি ও খুচরা বিক্রেতা যথাক্রমে ১৭ থেকে ২২ শতাংশ এবং বিনিয়োগ করা মূলধনের ওপর মধ্যস্ততাকারীরা গড়ে ১৮ শতাংশ লাভ পান। তথ্য বলছে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দেশে ৭ লাখ ৫৯ হাজার টন পেঁয়াজের আমদানি হয়। কিন্তু ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশে ১০ লাখ ৪১ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। অর্থাৎ ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৩ লাখ ৪০ হাজার টন বেশি পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। এছাড়া চলতি অর্থবছরের বিগত চার মাসেও প্রচুর পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। এদিকে দেশে বার্ষিক ২২ থেকে ২৪ লাখ টন পেঁয়াজের চাহিদা থাকলেও ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশে ১৮ লাখ ৬৬ হাজার টন পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছে। যা আগের বছরের চেয়ে ১ লাখ ৩১ হাজার টন বেশি। আমদানি ও উৎপাদন মিলে চাহিদার অতিরিক্ত পেঁয়াজ দেশে রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে পেঁয়াজের দর বাড়ার নেপথ্যে শুধুই সিন্ডিকেটের কারসাজি বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। উৎপাদন ও আমদানির সংকট নাই জানিয়ে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, বর্তমানে পেঁয়াজের অস্বাভাবিক বাজার সৃষ্টির পিছনে ব্যবসায়ীদের হাত রয়েছে। সম্প্রতিক সময়ে ভারতে পেঁয়াজের আমদানি মূল্য বাড়লেও বাড়তি দামের পেঁয়াজ এখনও ব্যবসায়ীদের হাতে এসে পৌঁছায়নি। তবুও অক্টোবরের পর থেকে ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে পেঁয়াজের দর। তিনি বলেন, পেঁয়াজ আমদানির জন্য এখনই আমাদের বিকল্প বাজার খুঁজতে হবে। পাশাপাশি বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের তদারকিও বাড়ানোর পক্ষে জোর দেন তিনি।
দুদকের জিজ্ঞাসাবাদে অসুস্থ হয়ে পড়লেন বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান পূর্ববর্তী

দুদকের জিজ্ঞাসাবাদে অসুস্থ হয়ে পড়লেন বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান

স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ৬৩% চা শ্রমিক পরবর্তী

স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ৬৩% চা শ্রমিক

কমেন্ট