মধ্যরাতে ঢাবি ছাত্রীদের হল ত্যাগে বাধ্য করল প্রশাসন

মধ্যরাতে ঢাবি ছাত্রীদের হল ত্যাগে বাধ্য করল প্রশাসন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি সুফিয়া কামাল হল থেকে কয়েকজন ছাত্রীকে হয়রানী ও হল থেকে বের করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে হল কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন শিক্ষার্থীকে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ, ফোন কেড়ে নেয়াসহ কয়েকজনকে বের করে দেয়া হয়। এদের মধ্যে অন্তি, রিমি ও শারমিন নামে তিন শিক্ষার্থীর নাম জানা গেছে। রাতেই রিমির অভিভাবককে হল থেকে ফোন করে ডেকে আনা হয়। রিমির বাবা ফারুক হোসেন জানান, সুফিয়া কামাল হলে মারামারির সময় রিমি সাভারে ছিল। কারণ ওই দিন তার নানা মারা যান। মাত্র দু'দিন আগে সে হলে এসেও আজ রক্ষা পায়নি। হল ত্যাগ করতে হয়েছে। সুফিয়া কামাল হলের প্রাধ্যক্ষ সাবিতা রেজওয়ানা বলেন, আমরা অনেক ছাত্রীকে ডেকেছি। তাদের মোবাইল চেক করা হচ্ছে। তারা বিভিন্ন ফেক অ্যাকাউন্ট খুলে গুজব ছড়াচ্ছে। মুচলেকা দিয়ে তাদের স্থানীয় অভিভাবকের সঙ্গে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এর প্রতিবাদে রাত দেড়টার দিকে ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী এস এম ইয়াসিন আরাফাত একাই প্রভোস্টের পদত্যাগের দাবিতে হলের ফটকে অবস্থান নেন। পরে রাত দুইটার দিকে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতারা ইয়াসিনের সঙ্গে যোগ দেন। তাঁরা সেখানে বিক্ষোভ করেন। অনেকে স্লোগান দেন, ‘ভয় দেখিয়ে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না, আমার বোন পথে কেন প্রশাসন জবাব চাই।’ বৃহস্পতিবার রাত আড়াইটা পর্যন্ত তাঁরা সেখানে অবস্থান নেন। শুক্রবার দেশের প্রতিটি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করে অবস্থান শেষ করেন সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতারা। কোটা সংস্কার আন্দোলনের মঞ্চ বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার রক্ষা পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক বলেন, রাতে আটজনকে বের করে দেয়া হয়েছে। হল কার্যালয়ের একটি সূত্র বলছে, রাত ৯টা থেকে কমপক্ষে ৫০ জনকে হল থেকে বের করে দেয়া হয়। তবে সবাইকে একসঙ্গে বের করে দেওয়া হয়নি এদিকে কতজন শিক্ষার্থীকে রাতে বের করে দেয়া হয়েছে সে বিষয়ে নির্দিষ্ট সংখ্যাও জানা যায়নি। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১১টা ৪৮ মিনিটে একজন ছাত্রীকে বের করে দেয়া হয়। ওই ছাত্রীর বাবা ছাত্রীকে মোটরসাইকেলে বসিয়ে দ্রুতবেগে চলে যান। সেসময় তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে চাননি। এরপর রাত ১২টা ৪০মিনিটে এক ছাত্রীর বাবা হলের ফটক দিয়ে ঢোকার সময় সাংবাদিকদের বলেন, তাঁকে ফোন করে হলে এসে তাঁর মেয়েকে নিয়ে যেতে বলা হয়। এরপর থেকে ওই ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। তিনি ধামরাই থেকে হলের গেটে পৌঁছে অপেক্ষা করছিলেন। পরে তিনি একাই সেখান থেকে চলে যান। সেসময় তিনি সাংবাদিকদের কাছে বলেন, তাঁর মেয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিল। আন্দোলনের কারণে সে রাতেও হল থেকে বের হয়েছিল। ভবিষ্যতে যেন এমন কিছু না হয় হল থেকে এসব বিষয়ে তাঁকে ডেকে হুঁশিয়ার করা হয়েছে। বিষয়টি জানতে হলের প্রাধাক্ষ্যকে বার বার ফোন দেয়া হলেও তিনি ফোন ধরেননি। এ ঘটনার প্রতিবাদে সুফিয়া কামাল হলের গেটের সামনে বিক্ষোভ করেছে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী। সাধারণ ছাত্রীরা হলের এই অবস্থানের বিরোধিতা করছেন। তাঁরা মারাত্মক আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। তাঁরা বলছেন হলের প্রাধ্যক্ষ আরও বহু ছাত্রীর ছাত্রত্ব বাতিল করে দেয়া, গোয়েন্দা নজরদারি ও মামলার ভয় দেখাচ্ছেন। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, 'ছাত্রীদের হয়রানির অভিযোগ সত্য নয়। এগুলো গুজব। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে একটি দুষ্টচক্র গভীর ষড়যনে্ত্র নেমেছে। হয়রানির মতো কিছু হচ্ছে না।' এর আগে সুফিয়া কামাল হল কর্তৃপক্ষ ছাত্রী লাঞ্ছনাসহ ১১ই এপ্রিল সংঘটিত ঘটনা তদন্তেপাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে। সেই কমিটি ছাত্রী লাঞ্ছনার অভিযোগ থেকে ছাত্রলীগ নেত্রী এশাকে অব্যাহতি দিয়ে উল্টো ২৬ ছাত্রীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করে। অথচ এশা ছাত্রীদের ডেকে নিয়ে বিভিন্ন হুমকি-ধমকি ও হয়রানি করলেও তাতে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন।
সুফিয়া কামাল হলের তিন ছাত্রী হলে ফিরেছেন পূর্ববর্তী

সুফিয়া কামাল হলের তিন ছাত্রী হলে ফিরেছেন

জাবি শিক্ষকদের ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিন পরবর্তী

জাবি শিক্ষকদের ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিন

কমেন্ট