অনুদানের টাকা পায়নি ৮০ ভাগ পরিবার

অনুদানের টাকা পায়নি ৮০ ভাগ পরিবার

রাজধানীর বেইলি রোড ট্র্যাজেডিতে যারা নিহত হয়েছেন তাদের পরিবারের ৮০ ভাগই সরকারি অনুদানের টাকা পায়নি। স্বজনদের অনেকেই জানেন না কোথা থেকে দাফন-কাফনের সহায়তার টাকা দেওয়া হয়েছে। তাই ধার দেনা করে অনেকের লাশ দাফন করা হয়েছে। এদিকে উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে অনেক পরিবার মানবেতর জীবনযাপন করছে। ঘটনার মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো তাদের সহায়তার কোনো ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। অথচ ঘটনার পরই সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয় দাফন-কাফনের জন্য প্রত্যেকের পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। পরবর্তীতে পরিবারগুলো সহায়তা পাবে সেই আশ্বাসও দেওয়া হয়। কিন্তু সেই উদ্যোগ নেই দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে অনুদান বাবদ তাৎক্ষণিক ১০ লাখ টাকা ঢাকা জেলা প্রশাসনকে দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে আর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ঢাকা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, তারা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে অনুদানের টাকা নেওয়ার জন্য বলেছেন। কিন্তু বেশিরভাগই টাকা নেয়নি।

আর ঢাকা জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ২৯ ফেব্রুয়ারি বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নিহত ৪৬ জনের মধ্যে ৯ জনের পরিবারকে সরকার ঘোষিত দাফন-কাফনের অনুদানের ২৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ শতকরা হিসাবে ৮০.৪৪ ভাগের পরিবার অনুদানের টাকা পায়নি। এছাড়া আহত প্রত্যেকের জন্য বরাদ্দ করা ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা নিয়েছেন ১২ জন। লাশ হস্তান্তরের দায়িত্বে থাকা ঢাকার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট একেএম হেদায়েতুল ইসলাম বলেন, ‘দাফন কাফনের অনুদানের টাকা নেওয়ার কথা বলা হলেও ক্ষতিগ্রস্ত বেশিরভাগ পরিবার টাকা নেয়নি।’

এ বিষয়ে নিহত অন্তত ২০ জনের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তাদের মধ্যে মাত্র একজনের স্বজনরা বলেছেন তারা ২৫ হাজার টাকা পেয়েছেন। অপর একজনের স্বজনরা বলেছেন তারা টাকা নেওয়ার প্রয়োজন মনে করেননি। অন্যদের স্বজনরা জানান, প্রয়োজন থাকলেও কোনো সহায়তা তারা পাননি।

নিহতদের একজন মো. নাঈম (২২)। বাবার ঋণের বোঝা কমাতে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েই বরগুনার ছোট গরিসন্না থেকে ঢাকা চলে আসেন। একটি সিকিউরিটি এজেন্সিতে ১০ হাজার টাকা বেতনে চাকরিও নেন। চাকরিতে যোগ দেওয়ার মাত্র তিন দিনের মাথায় বেইলি রোড ট্র্যাজেডিতে মারা যান নাঈম। যে ভবনে আগুন লাগে তার নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন তিনি। তার মামা ইলিয়াস বলেন, লাশ নেওয়ার সময় সরকারের পক্ষ থেকে একটি টাকাও দেওয়া হয়নি। পরবর্তীতে কোনো যোগাযোগও করেনি কেউ।

গ্যাসের বিল আনতে গিয়ে অগ্নিকাণ্ডে মারা যান শিপন মিয়া নামের এক যুবক। তার লাশ নেওয়ার সময় কোনো টাকা পায়নি শিপনের পরিবার।

ওই ঘটনায় বরিশাল সদরের মো. রিয়াজুলের ছেলে নাহিয়ান আমিন মারা যান। তিনি বুয়েটের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার দুলাভাই মাহিন বলেন, লাশ নেওয়ার সময় সরকারি অনুদানের কোনো টাকা তারা পাননি।

ওই ঘটনায় রাজধানীর রমনা থানা এলাকার সার্কিট হাউজ রোডের বাসিন্দা লুৎফুর নাহার লাকী ও তার মেয়ে জান্নাতুল তাজরীর মারা যান। তার পরিবারও কোনো টাকা পায়নি। পরে তাদের সঙ্গে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো যোগাযোগও করা হয়নি।

 

কুমিল্লায় স্বামীকে হত্যার দায়ে স্ত্রীসহ ৪ জনের মৃত্যুদণ্ড পরবর্তী

কুমিল্লায় স্বামীকে হত্যার দায়ে স্ত্রীসহ ৪ জনের মৃত্যুদণ্ড

কমেন্ট