সঠিক কথা বলে সমালোচিত হলেও বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল অর্থমন্ত্রী তিনি

সঠিক কথা বলে সমালোচিত হলেও বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল অর্থমন্ত্রী তিনি

অর্থমন্ত্রী হচ্ছেন বাংলাদেশ সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রধান। পাঁচ (৫) বছরের জন্যে ক্ষমতাসীন দলের প্রধান কর্তৃক মনোনীত ও রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিয়োগ প্রাপ্ত হয়ে মন্ত্রীপরিষদের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হিসাবে পরিচিত এই পদে অধিষ্ঠিত হতে হয়। অর্থমন্ত্রীকে অন্যান্য সকল মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সাথে কাজ করতে হয় এবং প্রতিটি তহবিল সংক্রান্ত বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের অর্থনীতির বৈঠা থাকে অর্থমন্ত্রীর হাতে। সেই বৈঠা হাতে নানাসময় নানা পদক্ষেপ ও গুরুত্বপূর্ণ কথা বলে সমালোচিত হলেও বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল অর্থমন্ত্রী হচ্ছেন আবুল মাল আবদুল মুহিত। সৎ, ন্যায়নিষ্ট, কর্মযোগী ও স্পষ্টভাষী বিরল ব্যক্তিত্ব, বাংলাদেশ সরকারের বর্তমান অর্থমন্ত্রী জনাব আবুল মাল আবদুল মুহিত। একদিকে তিনি সফল অর্থমন্ত্রী, খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদ, সরকারের প্রজ্ঞাবান সচিব, কুটনীতিবিদ, গবেষক, চিন্তাবিদ, লেখক ও সংগঠক; অন্যদিকে সহজ-সরল, ক্রীড়াপ্রেমী ও আমুদে মানুষ। কর্মযোগী মুহিত ছিলেন বরাবরই মেধাবী ছাত্র। তিনি যেমনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষায় প্রথম হয়েছিলেন, তেমনি আবার প্রাইমারি ভর্তি পরীক্ষায় অকৃতকার্যও হয়েছিলেন। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা জীবনে প্রবেশ গভর্নমেন্ট হাই ইংলিশ স্কুলে (বর্তমানে সিলেট সরকারি পাইলট স্কুল) তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তির মধ্য দিয়ে। ১৮৪১ সালে স্থাপিত এটিই সিলেট শহরের প্রাচীনতম স্কুল যে স্কুলে আমার ভাই-বোনদের প্রায় সবাই এমনকি বাবা, দাদা, পরদাদাও পড়াশোনা করেছেন। আমার দাদা খান বাহাদুর আবদুর রহিম এ স্কুলে দু`বছর শিক্ষকতাও করেছিলেন। ফার্স্ট ডিভিশনে ম্যাট্রিক পাস করে এমসি কলেজে ভর্তি হন তিনি। ১৯৪৮ সালে ভাষা আন্দোলনের শুরু থেকেই জড়িত ছিলেন। তার আব্বা-আম্মা মুসলিম লীগার হওয়া সত্ত্বেও তাঁরা ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন, তাই তার পক্ষে ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় থাকা ছিল স্বাভাবিক। ১৯৫১ সালে তিনি আইএ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে সাবেক পূর্ব পাকিস্তানে ১ম স্থান অর্জন করে কলেজে হৈ-চৈ ফেলে দেন। পরবর্তীতে ইংরেজী সাহিত্যে স্নাতক (সম্মান) শ্রেণীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সেখান থেকে ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে ঐ বিষয়ে প্রথম শ্রেণী পেয়ে কৃতকার্য হন এবং একই বিষয়ে ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন। বিদেশে চাকুরীরত অবস্থায় অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেন তিনি। অতঃপর ১৯৬৩-৬৪ শিক্ষাবর্ষে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমপিএ ডিগ্রী লাভ করেন। পাকিস্তান সিভিল সার্ভিস সংস্থার কেন্দ্রীয় কমিটির মহাসচিব হিসেবে ছিলেন আবুল মাল আবদুল মুহিত। ১৯৬০ থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত তিনি এ দায়িত্বে ছিলেন। অর্থনৈতিক পরামর্শক হিসেবে ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তৎকালীন পাকিস্তান দূতাবাসে যোগদান করেছিলেন। চাকুরীরত অবস্থায় পাকিস্তান কর্মপরিকল্পনা কমিশনের প্রধান ও উপ-সচিব ছিলেন। ঐ সময় তিনি পূর্ব এবং পশ্চিম পাকিস্তানের বৈষম্য প্রতিবেদন আকারে তুলে ধরেন ও পাকিস্তান জাতীয় কংগ্রেসে পেশ করেন। ওয়াশিংটনে তৎকালীন পাকিস্তানের দূতাবাসে প্রথম কূটনীতিবিদ হিসেবে ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে অণুষ্ঠিত বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের স্বপক্ষে নিজ অবস্থান তুলে ধরে চাকুরী থেকে ইস্তফা প্রদান করেন মুহিত। পরবর্তীতে স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে পরিকল্পনা কমিশনের সচিব হিসেবে নিযুক্ত হন। এছাড়াও, ১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দে অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বহিঃসম্পদ বিভাগের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মুহিত। বাংলাদেশ থেকে এসকাপের প্রথম চেয়ারম্যান হিসেবে ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দে দায়িত্বপালন করেন আবুল মাল আবদুল মুহিত। ১৯৮১ খ্রিস্টাব্দে আবুল মাল আবদুল মুহিত সরকারি চাকুরীজীবন থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নেন। এরপর তিনি ফোর্ড ফাউণ্ডেশনের অর্থনীতি এবং উন্নয়ন বিভাগের একজন বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেন। আন্তর্জাতিক কৃষি উন্নয়ন সংস্থা বা ইফাদেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। ১৯৮২-১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দে এরশাদ সরকারের অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছেন মুহিত। পরবর্তী সময়ে বিশ্বব্যাংকের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানসহ জাতিসংঘের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন। বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ, আইডিবি এবং জাতিসংঘের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পদে তিনি সুনামের সহিত দায়িত্ব পালন করেছেন। আবুল মাল আবদুল মুহিত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহা ঐক্যজোটের মনোনয়নে সিলেট-১ আসনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য হিসেবে প্রার্থী হন। ঐ নির্বাচনে জনতার রায়ে তিনি 'সংসদ সদস্য' হিসেবে নির্বাচিত হন। ৬ জানুয়ারী, ২০০৯ তারিখে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অর্থ মন্ত্রী হিসেবে শপথ বাক্য পাঠ করেন। এরপর থেকেই তিনি দেশের অর্থনীতির অন্যতম কাণ্ডারি। বিভিন্ন অর্থনৈতিক বিপর্যয় বা ক্রাইসিসে তিনি কঠিন বাস্তব মিডিয়ার সামনে তুলে ধরতে দ্বিধাবোধ করেননি। তাতে তাকে সমালোচিত হতে হলেও তিনি থেমে থাকেননি তার দায়িত্ব পালন থেকে। প্রতিবছর বছর দেশের অর্থনীতি প্রবৃদ্ধি বাড়ছে, বড় হচ্ছে বাজাটের আকার। সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাজেটের আকার হবে ৪ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। আমার স্বপ্ন ছিল পাঁচ লাখ কোটি টাকা দেওয়ার, কিন্তু এখন তা সম্ভব নয়। কেউ কেউ বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতের ব্যয় কমানোর পরামর্শ দিলেও আমরা তা কমাবো না। বরং এবার সামাজিক নিরাপত্তাভোগীর সংখ্যা বাড়ানো হবে। আগামী অর্থবছরের বাজেট নিয়ে অর্থনীতিবিদ ও উন্নয়ন সহযোগী, ব্যবসায়ী নেতা এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে প্রাক বাজেট আলোচনা শেষে তিনি এসব কথা বলেন। বিষয়টি দেখলে বোঝা যায় তার কর্মদক্ষতা আর যোগ্যতার বিষয়টি। দেশের পিছিয়ে থাকা জনগোষ্টির জন্যও রয়েছে তার নানামুখি চিন্তা, যার প্রতিফলন তিনি দেখিয়ে যাচ্ছেন বাজেটে। ব্যাংকিং সেক্টরের নানা প্রতিকূলতা তিনি সামাল দিচ্ছেন শক্তহাতে। তার কর্মদক্ষতায় পূর্ণ আস্থা রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার, আর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের। দেশকে এগিয়ে নিতে এই অর্থনীতিবিদের অবদান অনেক।
সর্বশেষ চার কার্যদিবসে দুই বাজারে বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি ২৭ হাজার কোটি টাকা পূর্ববর্তী

সর্বশেষ চার কার্যদিবসে দুই বাজারে বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি ২৭ হাজার কোটি টাকা

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রা নীতি ঘোষণা পরবর্তী

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রা নীতি ঘোষণা

কমেন্ট