আর্জেন্টিনার খরা কাটানোর কুশীলব রোমেরো এবার টটেনহ্যামেরও নায়ক

আর্জেন্টিনার খরা কাটানোর কুশীলব রোমেরো এবার টটেনহ্যামেরও নায়ক

ফাইনালের মঞ্চটা তৈরি, আর সেখানে বুক চিতিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে আর্জেন্টাইন ডিফেন্ডার ক্রিশ্চিয়ান রোমেরো; এ দুই যেন একে অন্যেরই সমার্থক। আর্জেন্টিনার ২৮ বছরের খরা কাটানোর সেই কোপা আমেরিকার ফাইনাল থেকে শুরু, এরপর বিশ্বকাপ ফাইনালেও একই দৃশ্যের দেখা মিলেছিল। এবার ইউরোপা লিগ ফাইনালেও ঘটল একই দৃশ্যের অবতারণা।

টটেনহ্যামের জয়ের পেছনে যে নামটা সবচেয়ে বেশি আলোড়ন তুলল, সেটা গোলদাতার নয়— সেটা রোমেরোর। আর্জেন্টিনার খরা কাটানোর অন্যতম সারথী তাই এবার রীতিমতো নায়কই বনে গেলে টটেনহ্যামের।

রোমেরো গত রাতে শুধু প্রতিপক্ষকে আটকানইনি, তিনি পুরো খেলার ছন্দটা নিয়ন্ত্রণও করছিলেন। মাঠে তার উপস্থিতি আগ্রাসী আত্মবিশ্বাসের জানান দেয়। সেটা কালও করলেন। রোমেরো কখনো ফাইনাল হারেননি। কেন, সে প্রশ্নের জবাবটা কাল রাতে দিলেন আরও একবার। টটেনহ্যাম গত রাতে ম্যাচের একটা বড় সময় খেলেছে লো ব্লকে, আর সে লো ব্লকের নেতৃত্বটা দিয়েছেন আর্জেন্টাইন এই ডিফেন্ডার, টটেনহ্যামের যে কোনো খেলোয়াড়ের চেয়ে বেশি বল ক্লিয়ার করেছেন। 

প্রোঅ্যাক্টিভ ডিফেন্ডিং তার খেলার ধরন। ঝুঁকি নিয়ে হলেও বক্সের বাইরে গিয়ে ডিফেন্ড করেন, পাসিংয়েও ঝুঁকি নেন, লং বল বাড়ান। সেসবের ছাপ গত রাতেও রেখেছেন। ৯২ শতাংশ পাস ঠিক দিয়েছেন, ১০টা বল ক্লিয়ার করেছেন, ১টা শট ঠেকিয়েও দিয়েছেন শরীর বাড়িয়ে দিয়ে।

তবে রোমেরোর শক্তিটা ঠিক এখানে নয়, তার ইস্পাতকঠিন মনোভাব দলকে চাঙ্গা করে যেমনভাবে, প্রতিপক্ষকেও মানসিকভাবে খানিকটা হলেও পিছিয়ে দেয়। গত রাতে প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডার হ্যারি ম্যাগুয়ের একটা সময় খেলছিলেন বাড়তি স্ট্রাইকার হিসেবে। তিনি তার মগজেও চড়ে বসেছিলেন রীতিমতো। রোমেরো কখনো কানে কানে কিছু বলে মনোযোগ ভাঙছিলেন, কখনো ধাক্কায় ভারসাম্য নষ্ট করছিলেন। কোনো কিছুই এমনভাবে করেননি যে সেটা ফাউল হিসেবে ধরা পড়ে। উল্টোটাই হলো। ম্যাগুয়েরই একটা পর্যায়ে ধৈর্য খুইয়ে বসলেন, তাকে সেখানে নিয়ে যাওয়ার কলকাঠিটা নাড়ছিলেন রোমেরোই তো!

ম্যাচ শেষে যখন টটেনহ্যাম ১-০ ব্যবধানে জয়ের হাসি হাসছে, তখন রোমেরো তেমন কোনো উল্লাসে মাতেননি। ম্যাচ শেষে ম্যাগুয়ের কিছু উত্তপ্ত বাক্য ছুঁড়ে দিয়েছিলেন তার উদ্দেশ্যে, কিন্তু রোমেরো সেসবেরও কোনো জবাব দেননি। তাকে কিছু বলার প্রয়োজনই ছিল না। স্কোরবোর্ডই তো তার হয়ে কথা বলেছিল!

রোমেরোর এমন পারফর্ম্যান্স তো নতুন কিছু নয়! ২০২১ কোপা আমেরিকার ফাইনালের কথা মনে করুন, সেবার তো মাঠেই নামার কথা ছিল না তার। তবু তিনি নেমেছিলেন। হাঁটুতে চোট ছিল, তা নিয়েই এমিলিয়ানো মার্তিনেজকে বলেছিলেন, ‘ভাই, আমি তোমাকে একা ছেড়ে দেব না।’ 

কথাটা রাখতে তিনি হাঁটুতে ইনজেকশন নিলেন, ফাইনালের শুরুর একাদশে নাম লেখালেন রীতিমতো ক্যারিয়ারকে হুমকির মুখে ফেলে। তার এমন কাণ্ড দেখে খোদ এমি মার্তিনেজ বলে বসেছিলেন, ‘আপনারা আমাকে পাগল বলেন, তাহলে কুতিকে (রোমেরোর ডাকনাম) কী বলবেন?’

সে ফাইনালে নেইমারকে একটা ট্যাকল আর রেনান লোদিকে একটা ফাউল বাদে খুব বড় কিছু তিনি করেননি। তবে তার মানসিক দৃঢ়তা গোটা আর্জেন্টিনায় একটা বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছিল, প্রাণের শেষ বিন্দু দিয়ে হলেও ওই শিরোপাটা। গতকাল টটেনহ্যামকেও দিল, সঙ্গে যোগ হলো তার ক্ষুরধার পারফর্ম্যান্সটাও। আর সেটাই দিল তাকে ম্যাচসেরার খেতাব। আর্জেন্টিনার খরা কাটানোর কুশীলব এভাবেই নায়ক বনে গেলেন টটেনহ্যামেরও।

টি-টোয়েন্টি দলে বাবর-রিজওয়ানের ভবিষ্যৎ নিয়ে কোচ যা জানালেন পরবর্তী

টি-টোয়েন্টি দলে বাবর-রিজওয়ানের ভবিষ্যৎ নিয়ে কোচ যা জানালেন

কমেন্ট