অভিবাসন বিরোধী অভিযানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে উত্তাল লস অ্যাঞ্জেলেস, কারফিউ জারি

অভিবাসন বিরোধী অভিযানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে উত্তাল লস অ্যাঞ্জেলেস, কারফিউ জারি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসন বিরোধী অভিযানের বিরুদ্ধে টানা পাঁচ দিনের বিক্ষোভের মুখে লস অ্যাঞ্জেলেস শহরের কেন্দ্রস্থলে মঙ্গলবার রাত আটটা থেকে কারফিউ জারি করেছে স্থানীয় প্রশাসন। ডেমোক্রেটিক গভর্নর গ্যাভিন নিউসাম এই সামরিক উপস্থিতিকে ‘গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ওপর হামলা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

বিক্ষোভ চলাকালীন ট্রাম্প সরকার জাতীয় রক্ষীবাহিনীর চার হাজার সদস্য এবং ৭০০ মেরিন মোতায়েনের নির্দেশ দেয়, যা রাজ্য ও শহর প্রশাসনের তীব্র আপত্তির মুখেও কার্যকর হয়েছে। যদিও এখনো মেরিন সেনাদের সরাসরি মাঠে দেখা যায়নি।


এদিকে গভর্নর নিউসাম একটি আদালতে আবেদন করেছেন, যেন সামরিক বাহিনীর মাধ্যমে অভিবাসন কর্মকর্তাদের সহায়তা বন্ধ করা হয়। তবে বিচারক এখনই কোনো রায় না দিয়ে বৃহস্পতিবারের শুনানি পর্যন্ত সময় দিয়েছেন, যার ফলে এই কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে পারবে ফেডারেল প্রশাসন।

নিউসাম বলেন, ‘এই সামরিক অভিযানের মাধ্যমে জনগণের মধ্যে উত্তেজনা আরো বাড়বে এবং অস্থিতিশীলতা তৈরি হবে। ক্যালিফোর্নিয়া হয়তো শুরু, কিন্তু এখানেই থামবে না।


বাকি রাজ্যগুলোও এর কবলে পড়বে।’
কারফিউ ও পুলিশের কঠোর অবস্থান

লস অ্যাঞ্জেলেসের মেয়র ক্যারেন ব্যাস মঙ্গলবার সন্ধ্যায় স্থানীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে জানান, রাত ৮টা থেকে পরদিন সকাল ৬টা পর্যন্ত কারফিউ কার্যকর থাকবে। ডাউনটাউনের এক বর্গমাইল এলাকাজুড়ে এই নির্দেশ জারি করা হয়েছে, যেখানে শুক্রবার থেকে বিক্ষোভ চলছে।

পুলিশপ্রধান জিম ম্যাকডনেল বলেন, ‘শনিবার থেকে আইন ভঙ্গ ও সহিংস আচরণ বেড়ে চলেছে।


শহরকে রক্ষা করতে কারফিউ জরুরি পদক্ষেপ।’ কারফিউর আওতার বাইরে থাকবে স্থানীয় বাসিন্দা, গৃহহীন, গণমাধ্যমকর্মী এবং জরুরি পরিষেবার কর্মীরা।
মঙ্গলবার রাতের বিক্ষোভে শতাধিক মানুষ পুলিশের অবরোধ উপেক্ষা করে কেন্দ্রীয় ফেডারেল ভবনের কাছে অবস্থান নেয়। পুলিশের হেলিকপ্টার মাইকিং করে এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দেয়। দাঙ্গা পুলিশ ঘোড়া ও পায়ে হেঁটে অবস্থানকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে অভিযান চালায়।

বিক্ষোভের সূত্রপাত হয় গত শুক্রবার, যখন অভিবাসন দপ্তর (আইসিই) লস অ্যাঞ্জেলেসে কর্মস্থলে অভিযান চালিয়ে ডজনখানেক অভিবাসীকে গ্রেপ্তার করে। এর জেরে বিক্ষুব্ধ জনতা একটি প্রধান সড়কজ অবরোধ করে এবং গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। পুলিশ তখন টিয়ার গ্যাস, রাবার বুলেট এবং ফ্ল্যাশ গ্রেনেড ব্যবহার করে উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণে আনে।

বিক্ষোভ শুধু লস অ্যাঞ্জেলেস নয়, ডালাস, অস্টিন, শিকাগো, নিউইয়র্ক সহ অন্যান্য শহরে ছড়িয়ে পড়েছে। নিউইয়র্কে হাজারখানেক মানুষ অংশ নেয় এবং একাধিক গ্রেপ্তার হয়। শহরের বিভিন্ন এলাকায় আইসিই-এর কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় সংগঠনগুলো। 

গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত মোট ১৯৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিক্ষোভের কারণে বেশিরভাগ গ্রেপ্তার হলেও, কয়েকজনের বিরুদ্ধে মারাত্মক অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে—যেমন দাঙ্গা, লুটপাট, ভাঙচুর ও মলোটোভ ককটেল নিক্ষেপের মাধ্যমে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ। এ ঘটনায় ৭ পুলিশ আহত হন, দুইজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি ও বিতর্কিত বক্তব্য

হোয়াইট হাউস থেকে ট্রাম্প জানান, ‘যদি বিদ্রোহ ঘটে, তবে আমি ইনসারেকশন অ্যাক্ট প্রয়োগ করব।’ এই আইনের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট দেশীয় সহিংসতা বা বিদ্রোহ ঠেকাতে সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে পারেন। ফোর্ট ব্র্যাগে এক ভাষণে ট্রাম্প বিক্ষোভকারীদের ‘পশু’ এবং ‘বিদেশি শত্রু’ বলে আখ্যায়িত করেন।

সাম্প্রতিক ঘটনাবলীতে যুক্তরাষ্ট্রে নাগরিক অধিকার, অভিবাসন নীতি এবং ফেডারেল বনাম রাজ্য প্রশাসনের ক্ষমতার প্রশ্ন নতুন করে আলোচনায় এসেছে।

যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য আলোচনায় অগ্রগতি পরবর্তী

যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য আলোচনায় অগ্রগতি

কমেন্ট